নিজস্ব প্রতিবেদক
গৃহকর কমিয়ে দেওয়ার নামে ভবন মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। তারা হলেন, সিটি করপোরেশনের রাজস্ব সার্কেল-৭-এর কর আদায়কারী কাজী মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ও মোছলেহ উদ্দিন। একই ধরনের অভিযোগে আরও ১০ জনকে শোকজ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি মানুষ দিয়ে পুরো রাজস্ব বিভাগ মনিটরিং করছি। যেখানে অনিয়ম, ঘুষবাণিজ্য হবে সেখানে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।’ কারণ দর্শানোর নোটিশ যাদের দেওয়া হবে তারা হলেন, কর কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন শিকদার, উপকর কর্মকর্তা আবুল কালাম, মো. কামরুল হাসান ও রাজীব চৌধুরী, কর আদায়কারী আবদুল মোমেন পাটোয়ারী, মিশকাতুল ইসলাম, মো. সালাউদ্দিন, এম তৈয়বুর রহমান, মো. আনিছ উদ্দিন ও ত্রিদীপ দাশ।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে আইন অনুসারে পুনর্মূল্যায়ন করলে গৃহকর ৫ থেকে ১০ গুণ বেড়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ নগরবাসীর আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালে তা স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে চলতি বছর সে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। গত জুলাই থেকে এই গৃহকর আদায় শুরু হলে আবার নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গৃহকর নিয়ে নগরবাসীর আপত্তি আপিল শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। তবে ১৫ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা জানান গৃহকরের আপিল শুনানি নিয়ে ২০০ কোটি টাকার ঘুষ-বাণিজ্য হচ্ছে। গত শুক্রবার পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত গণশুনানিতেও ১৫ করদাতা অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর্মীরা এই গৃহকর কমিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন।
গতকাল সকালে নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সিটি করপোরেশনের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের কাউন্সিলরদের সাথে গৃহকর বিষয়ে সভা করেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ সহনীয় পর্যায়ে কর আদায়ের বিষয়টি প্রতিটি ভবনের মালিকের কাছে পৌঁছাতে হবে। মাঝে কোনো গোষ্ঠি যাতে মধ্যস্থতা করে বাণিজ্য করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন মেয়র। এ সময় তিনি বলেন, আমরা নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাই নগবাসীর কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। কোন বিষয় নিয়ে নাগরিকদের সাথে আমদের দূরত্ব কাম্য হতে পারে না। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল গৃহকর নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। আমি বার-বার বলছি ২০১৭-২০১৮ সালে গৃহকর মূল্যায়নে ব্যাপক অসঙ্গতি হয়েছে। সেই অসঙ্গতি আপিলের মাধ্যমে সংশোধন করা যাবে। ইতোমধ্যে অনেক নাগরিক আপলি করেছেন তাদের কর সহনীয় পর্যায়ে ধার্য করা হয়েছে এবং তারাও সন্তুষ্ট হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে বলতে হচ্ছে কিছু লোক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে সিটি করপোরেশন ও নাগরিকদের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন মেয়র।