কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, এ সুখবর চট্টগ্রামবাসীকে দারুণ আলোড়িত করছে। আর মাত্র একমাস পর চট্টগ্রামবাসীর সাথে দেশবাসীও উচ্ছাস ও আনন্দে ভেসে বেড়াবে। খরস্রোত পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী যে প্রশংসা অর্জন করেছে, আমাদের ধারণা তার চেয়ে বেশি প্রশংসিত হবেন এ টানেলের জন্য। এ টানেল দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড়ধরনের পরিবর্তন আনবে। এটি হবে দেশের জন্য সেরা মাইলফলক। প্রতিবেদনে দেখা গেছে এটি শুধু বাংলাদেশে প্রথম নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সুড়ঙ্গপথ। তবে টানেলের সাথে যুক্ত দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারমুখী সড়কগুলোর উপযোগিতা বৃদ্ধি করা না গেলে টানেলের কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাবে না।
সূত্র জানায়, আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে টানেলের উদ্বোধন করবেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে টানেলটি। এরই মধ্যে মূল টানেলের কাজ শতভাগ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ শতাংশ। টানেল উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। এসময় সেতু সচিব জানান, ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের টানেলের কাজ করার কথা থাকলেও এর আগেই কাজ শেষ করেছি। তিনি বলেন, এখানে একটি মজার বিষয় হচ্ছে টানেলে ঢুকার আগে যেসব গাড়ি এফএম রেডিও চালু করবে সেসব গাড়িতে টানেল ব্যবহারের নীতিমালা অটোমেটিক শোনা যাবে। অধিকাংশ রেডিও স্টেশনে এই নীতিমালা রয়েছে। টানেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেডিওতে এই নীতিমালাগুলো পড়ে শুনানো হবে। সভায় প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ টানেলের খুঁটিনাটি সব তুলে ধরে বলেন, মূল টানেলের কাজ শতভাগ শেষ। তবে পুরো প্রকল্পের কথা বললে অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ। যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে তা চলাচলে জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এপ্রোচ রোড, সার্ভিস এরিয়া, পুলিশের ফাঁড়ি নির্মাণ ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। সভা শেষে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্ব নয়, জাতির জন্যও গর্বের বিষয়। এসময় টানেলকে কেন্দ্র করে নানা পরিকল্পনার কথা তিনি সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপন করেন। তিনি স্পষ্ট করেন, টানেলের একটি বড় লক্ষ্য আছে সেটা হলো, কক্সবাজারে কিছু বড় প্রকল্প হচ্ছে। আগামী দুই-চার বছরের মধ্যে সেই প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য টানেলটি ব্যবহার করা হবে। সেসময় তিনি বলেন, টানেলের কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন। সেজন্য এটার কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। ভেতরে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য রেসকিউ কিভাবে হবে? সেটা অন্য ব্রিজ বা সড়ক থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদের এই জিনিসটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে যাতে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে। সেই ধারণা থেকে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটা নিরাপদ হবে না বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বঙ্গবন্ধু টানেল কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই টানেলের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। এ টানেলকে কেন্দ্র করে সরকারের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে তা অবশ্যই যথাযথ ও প্রশংসনীয়। কিন্তু সব পরিকল্পনা সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করতে হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়কটি ৬ লাইনে উন্নীত করার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারমুখী এ সড়কটি এখনও চার লাইনে উন্নীত হয়নি। সরকারের সড়ক যোগাযোগ ও সেতু বিভাগ এ বিষয়টির প্রতি গভীর মনোযোগ দিবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।