শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে থিওরিটিক্যাল পড়াশোনা করানো হয়, তা চাকরির জন্য পর্যাপ্ত নয়। চাকরির জন্য বাস্তবতার সাথে মিলে এমন জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কম্পিউটার দক্ষতা, কমিউনিকেশন স্কিল, বিশ্লেষণ দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা আমাদেরকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সবাইকে এসব দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে বিশ্ববাজারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
গতকাল শনিবার বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’র দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
চন্দনাইশে নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি শিক্ষার্থীদের ডিগ্রির সনদ প্রদান করেন।
এবারের সমাবর্তনে ৩টি অনুষদের অধীনে ৫টি বিভাগের মোট ৪,৬৬৩ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে ৫ জনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল, ৪ জনকে ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ৬ জনকে চেয়ারম্যান গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এফ এম আওরঙ্গজেবের স্বাগত বক্তব্যে শুরু এ আয়োজনে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমিরেটাস, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, বিজিসি ট্রাস্ট’র প্রতিষ্ঠাতা ও ইউনিভার্সিটি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমদ ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র সদস্য ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমদ আসিফ।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু নিজ দেশের অর্থনীতি বা পরিবেশ বিবেচনা করে পড়াশোনা করানো হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যেসব কোর্স শেখানো হয় তা পুরো পৃথিবীতে প্রয়োগযোগ্য। তবে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চাকরির জন্য যথেষ্ঠ নয়। এরজন্য আরও কিছু দক্ষতা অর্জন করা দরকার। যার জন্য আমরা শতাধিক কোর্স চালু করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের ছেলেদের থিওরিটিক্যাল নলেজ ভরপুর। তাদের বাস্তবিক জ্ঞান বা দক্ষতা কম। তাই চাকরির বাজারে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে বহুমাত্রিক দক্ষতা ও ভাষা জানতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সফট স্কিল অর্জন করতে হবে। শিক্ষানবিশ বা বিনা বেতনে হলেও কাজে লেগে যেতে হবে। তাহলে একটা সময় দক্ষতার জোরে বিশ্ববাজারে কদর বাড়বে।
সমাবর্তন বক্তা প্রফেসর ইমিরেটাস ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, অন্যকে অনুকরণ করে তোমার জীবনের স্বল্প সময় নষ্ট করো না। তোমার মস্তিষ্কে যা আসে, তা করবে। যেটাই ভালো লাগে, সেটাই করবে। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করো, যা তোমার সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেকে অন্যের সাথে মিলিয়ে হতাশ হয়ে যায়। যা একেবারেই কাম্য নয়। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবে না। যখন তুলনা করবে, তখন মনে হবে তুমি অদক্ষ। বয়সটা এখন এগিয়ে যাওয়ার। যেমন যৌবনে ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমদ এই গ্রামীণ জনপদে একটি মানুষ গড়ার কারখানা গড়ে তুলেছিলেন।
ইউজিসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, আফছার উদ্দিন আহমমদ চাইলেই বড় কোন কারখানা দিতে পারতেন। কোন শিল্প কারখানার মালিক হতে পারতেন। কিন্তু তিনি একটি উদ্যেগ নিয়েছেন। যার ফসল আজকে তোমরা যারা এখানে বসে আছো।
বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্যরা যখন ফ্যাক্টরি করেছে, তখন আমিও ফ্যাক্টরি করেছি, তবে সেটি কোনো শিল্প কারখানা নয়, আমি করেছি মানুষ তৈরির ফ্যাক্টরি।
তিনি বলেন, আমি এ জনপদের মানুষের কথা ভেবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছি। আমি যখন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েছি, এ জনপদের মানুষ আমাকে সহযোগিতা করেছে।
অনুষ্ঠানে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩৩টি ব্যাচে মোট ১২,৬৮০ জন শিক্ষার্থী সফলভাবে তাদের গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ১ম সমাবর্তনে ৭,৩৭৭ জনকে গ্রাজুয়েশন সনদ প্রদান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি