ঢাকা প্রতিনিধি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত কোনো রোগীকে যেন ঢাকায় স্থানান্তর করা না হয়। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।
ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ঢাকার তুলনায় অন্যান্য জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়েছে। আমরা ঢাকার বাইরে সব জায়গায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। সারা দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আইভি ফ্লুইড সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
আহমেদুল কবির বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে হেলথ কেয়ার ম্যানেজার আছেন, তাদের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি। আমাদের সিভিল সার্জন, ডিভিশনাল ডিরেক্টর, সর্বস্তরের হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি, আমরা একটা বিষয় বোঝাতে চেয়েছি, কোনো রোগীকে অপ্রয়োজনে ঢাকায় স্থানান্তর না করার নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, এখানে দুই তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু চিকিৎসায় মূল বিষয়টি হচ্ছে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট বলতে যখন রোগীর প্রেশার কমে যাচ্ছে, তখন যথাযথ সময়ে আইভি ফ্লুইড দেওয়া। আইভি ফ্লুইড দেওয়ার জন্য অনেক যন্ত্রপাতি বা বড় কোনো ধরনের হাসপাতালে প্রয়োজন নেই, বরং প্রান্তিক পর্যায়ে শকে আছেন যে রোগী, তার শক ম্যানেজ না করে যদি ঢাকায় পাঠানো হয়, তাহলে যাত্রাপথের এই লম্বা সময়ে নিশ্চিতভাবে এই রোগীকে আমরা হারাবো। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই খারাপ রোগী হোক, শকের রোগী হোক, যেখানে আছে সেখানেই যদি চিকিৎসা নেওয়া হয়, তাহলে রোগীর বিপর্যয় হবে না।
গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে ডা. আহমেদুল কবির জানান, জেলা, উপজেলায়, মেডিকেল কলেজ, যে যেখানে আছেন, সেখানেই চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের রোগীরা যেন সেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেখানেই চিকিৎসা নেয়।
স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে : ডা. আহমেদুল কবির বলেন, স্যালাইনের সংকট কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের স্থানীয় যেসব কোম্পানি আছে তার বাইরেও আমরা স্যালাইন আমদানি করে কৃত্রিম সংকট উত্তরণ করতে পারি। সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
স্যালাইনের সরবরাহ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছেন, ১০০ টাকার স্যালাইন ৪০০ টাকা রাখছে, স্টকে থাকলেও বলছে নাই। জাতীয় দুর্যোগে যারা এসব কাজ করে তারা তো দেশপ্রেমিক না।
তিনি বলেন, বাসায় আমরা স্যালাইন দিয়ে রোগীর চিকিৎসায় উৎসাহ দেই না। এতে রোগীর অবস্থা খারাপ হবে। তাদের হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেওয়া বাঞ্ছনীয় হবে। যার আইভি ফ্লুইড লাগবে তার বাসায় চিকিৎসা করা সমীচীন হবে না।
আজ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অভিযান : এদিকে আজ সোমবার থেকে সারা দেশের হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদফতর আবারও অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর এই ক্রান্তিকালে আমরা এই অভিযান আরও জোরদার করবো।
তিনি আরও জানান, সিভিল সার্জনদের বলা হয়েছে একটি সমন্বয় টিম করার জন্য। সিভিল সার্জন, ভোক্তা অধিকার এবং লোকাল ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে একটি অভিযান চালানোর জন্য বলা হয়েছে। যেসব ফার্মেসি কিংবা ক্লিনিক স্যালাইন মজুত করেছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও অনুপযুক্ত আইসিইউ যাদের আছে তাদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আবার অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।