ট্রেন: ঢাকা থেকে কক্সবাজার আরেকটি মাইলফলক

6

দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার গৌরবময় প্রদর্শনও ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। বহুলপ্রতীক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ গত ২৮ অক্টোবর শনিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সাথে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের যাত্রা শুরু হলো। কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাত্রীবহন করে ট্রেন যাবে কক্সবাজারে। এটি দেশের মানুষের জন্য একটি বড় সুখবর। একই সঙ্গে দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনটিই স্থাপন করা হয়েছে কক্সবজারে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এ ঝিনুক আদলে নির্মিত আইকনিক স্টেশনটিও উদ্বোধন করা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুনাম রয়েছে বিশ্বব্যাপী।
পৃথিবীর দীর্ঘতম এ সমুদ্রসৈকত এবং কক্সবাজারের অসাধারণ সব দৃশ্য দেখার জন্য পর্যটকরা এখন ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনেই কক্সবাজার যেতে পারবেন। এতদিন এ শহরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল সড়কপথ। অনেকে বিমানে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত দেখতে যান। তবে এ রকম পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। সবচেয়ে বড় কথা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি মাত্র দুই লাইন বিশিষ্ট, কোন কোন স্থানে একলাইনেরও আছে। ফলে সড়ক পথ পাড়ি দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত যাত্রীদের। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে নতুন রেলপথে যাত্রা হবে আগের তুলনায় বেশি স্বস্তির। রেললাইনের দুপাশের শৈলীঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দ্রæত কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন পর্যটকরা। রেলযাত্রা যাতে প্রকৃত অর্থেই নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হয়, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। জানা যায়, ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্টগ্রাম যায়, এর সবকটিই কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকেও আলাদা ট্রেন কক্সবাজার চলাচল করবে। ঢাকা-কক্সবাজারের নতুন ট্রেন যোগাযেগের উদ্বোধন করা হয় গতকাল সোমবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমলাপুরে ট্রেনের পতাকা ও হুইসেল বাজিয়ে পর্যটন নগরীর এ ট্রেন উদ্বোধন করেন। নতুন এ রুটে আন্তঃনগর, লোকাল, কমিউটার-সব ধরনের ট্রেনই চলাচল করবে। ফলে শুধু ঢাকা বা দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গেই নয়, সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি হলো এতে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হলে কক্সবাজারের পর্যটন খাতের চিত্র পালটে যাবে-এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে রেলওয়ের। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে নতুন রেলপথটি।
এখন বছরজুড়ে পর্যটকের ভিড় থাকে কক্সবাজারে। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক ঘুরতে যান সেখানে। কক্সবাজারে রয়েছে শত শত হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউজ ও রেস্তোরাঁ। দেশে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ছে। কাজেই ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ট্রেন যাতায়াত যাতে সত্যিকার অর্থেই নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হয়, সেজন্য যা যা করা দরকার সবই করতে হবে। তা না হলে নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল মিলবে না। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর লক্ষ্যে তুলনামূলক কম ভাড়ায় ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাতায়াত করার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। শুধু রাজধানী ঢাকা থেকে নয়, আগামী দিনে যাতে সব বিভাগ থেকে পর্যটকরা রেলে কক্সবাজার যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা দরকার। বস্তুত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন পুরোপুরি চালু হলে তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একই সঙ্গে চাপ কমবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওপর।
চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজারে রেললাইন যোগাযোগব্যবস্থায় কালুরঘাট ব্রিজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ব্রিজটি বহুদিনের পুরোনো। তাই এর ওপর দিয়ে চলাচলে ঝুঁকির বিষয়টি বহুদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি ইতোমধ্যে মেরামত করে ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ব্রিজের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণেও নেওয়া হয়েছে পদক্ষেপ। নতুন কালুরঘাট ব্রিজ প্রকল্প যাতে দ্রæত বাস্তবায়িত হয়, কর্তৃপক্ষকে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
গত এক যুগে রেলে মোটা অঙ্কের বহু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও যাত্রীসেবার মান বাড়ছে না। রেল যাতে গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়, কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।