বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় করা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া হতে রক্ষায় করণীয়, চট্টগ্রামের মত দেশব্যাপী ওজন স্কেল স্থাপন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে মতবিনিময় সভা গতকাল বেলা ১১ টায় দৈনিক পুর্বকোণ কার্যালয়ে ইউসুফ চৌধুরী কনফারেন্স হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির কার্যকরী পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. শেখ শফিউল আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, মুখ্য আলোচক ছিলেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির স্থায়ী পরিষদের সভাপতি জসিম উদ্দীন চৌধুরী। মহাসচিব আলহাজ এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর এর সঞ্চালনায় সভায় আলোচক ছিলেন সংগঠনের স্থায়ী পরিষদের ভাইস প্রসিডেন্ট এস এম নুরুল হক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স’র সিনিয়র সহ সভাপতি
আলহাজ মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আলম, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক এমদাদুল হক, লায়ন নুরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ ইব্রাহীম, এডভোকেট ফয়েজুর রহমান বেলাল, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক বাহার উদ্দিন জুবাইর, কফিল উদ্দীন চৌধুরী মাহবুবুর রহমান ও ডা. মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
সিটি মেয়র বলেন হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে কোন প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। নগরবাসী যার যার সাধ্য ও সামার্থ অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স দিবে। যতবেশি এসেসম্যান্ট করা হোক না কেন, তা কিন্তু আগের সময়েই করা, আমার সময়ে নয়। আমাদের আপিল কমিটির নিকট গেলেই তা আগের নিয়ম থেকে যৎসামান্য নামমাত্র বাড়িয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স নগরবাসী দিতে পারবে, তার কোন ব্যতিক্রম হবে না। আর নগরবাসী যাতে কোন রকমের ভোগান্তি ছাড়া সহজে আপিল করতে পারে, তার জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ সহযোগিতা করবে। ওয়ার্ড অফিসে যাতে কোন ভোগান্তি না হয়, তার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। তিনি কোন রকমের অনৈতিক লেনদেন না করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানান।
তিনি নগরীর পরিস্কার পরিছন্নতার উপর জোর দিয়ে বলেন, ফুটপাত হকার ও দখলমুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। নগরীর যানজট নিরসন ও ফুটপাত হকার ও দখল মুক্ত রাখার জন্য তিনি পুলিশ কমিশনারের সহযোগিতা কামনা করেন।
জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পের বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, খালের উভয় পাশে রিটের্নিং ওয়াল নির্মাণ করতে গিয়ে খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে খালের পানি রাস্তায় উঠে যাচ্ছে। নগরীর সকল খালগুলো এখন মেগা প্রকল্পের অধীনে সিডিএর মাধ্যমে সংস্কার করা হচ্ছে। যে কারণে সিটি কর্পোরেশনের করার কিছু নাই। জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন হবে, তত তাড়াতাড়ি নগরবাসী তার সুফল পাবে।
তিনি ভরাট করা খালগুলো গভীরভাবে খনন করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, নগরী এখনতো গলা পর্যন্ত ডুবে, আর কদিন পর বাড়ির ছাদও ডুবে যাবে। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য জোর তাগিদ দেন।
চট্টগ্রামে পরিকল্পিত উন্নয়ন ও বিশ্বমানের শহরে পরিণত করতে প্রয়োজনে তিনি চট্টগ্রামের বিশিষ্ট জনদের সাথে বসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এই ব্যাপারে তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সহযোগিতা কামনা করেন।
মুখ্য আলোচক জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের আদিবাসী ও বসবাসরত সিংহভাগ মানুষের আয়ের একমাত্র মাধ্যম বাড়ি ভাড়া। এই ভাড়ার উপর নির্ভর করে চলে সিংহভাগ মানুষ। তদুপরি বিশ্ব মহামারী কোভিড এর কারণে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নয়, গোটা দেশেই সর্বস্তরের মানুষের আর্থিক দৈন্যতা চরম সংকটপূর্ণ মুহূর্ত অতিক্রম করছে। এমতাবস্থায় হোল্ডিং ট্যাক্সবৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ভাড়া ভিত্তিক নয় আয়তনের ভিত্তিতে পূর্বের নিয়মে নতুনভাবে এসেসমেন্ট করে ‘ঞযব সঁহরপরঢ়ধষ পড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ ঃধীধঃরড়হ ৎঁষবং ১৯৮৬’ বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের জন্য আপনার প্রতি বিনীত অনুরোধ রইলো।
সভাপতির বক্তব্য ডা. শেখ শফিউল আজম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর হতে আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্য বড় বড় ট্রাক, ট্যাংকলরিতে বহন করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে বা বন্দর আনতে হলে নির্দিষ্ট ওজন মাপের যাতে বেশি লোড করা না হয়, সেজন্য বড় দারোগারহাটে একটি ওজন স্কেল বসানো হয়েছে। সত্যিকার অর্থে যদি সড়ক-মহাসড়কের উপর চাপ কমাতে ওজন স্কেল দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে এটা শুধুমাত্র চট্টগ্রাম কেন? মংলা বন্দরসহ দেশের অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে নেই কেন? শুধুমাত্র চট্টগ্রাম যেকোনো পণ্য ঢুকা বা বের হতে এই ওজন স্কেল দিয়ে দেশের অন্য কোথাও ওজন স্কেল না থাকাটি কি রহস্যময় নয়? এক্ষেত্রে বাহিরের অন্যান্য জেলায় পণ্য পরিবহন করতে হলে যেহেতু ওজন স্কেল নাই, সেহেতু সে সমস্ত জেলায় আসা যাওয়ার প্রাক্কালে ট্রাক ও ট্যাংক-লরিগুলো ইচ্ছেমত মালামাল বা যে কোনো পণ্য লোড নিতে পারে। তাই সেসব জেলাসমূহ হতে মালামাল লোড আনলোড খরচ কম হয় বলে পন্যমূল্যের দামও কম হয়ে থাকে। আর শুধুমাত্র চট্টগ্রামে যেহেতু ওজন স্কেলের পরিমাপের বাহিরে যাবার সুযোগ নাই, তাই লোড-আনলোডের ক্ষেত্রে খরচ চট্টগ্রামে বেশি পড়ে। তাই এ বিষয়ে আমরা দাবি জানাই, দেশের প্রত্যেক জেলায় ওজন স্কেল বসানো হোক। অন্যথায় চট্টগ্রামের ওজন স্কেল তুলে নিনভ
এইচএম মুজিবুল হক শাকুর বলেন, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে সারাদেশের মতো চট্টগ্রাামবাসীও দিশাহারা। মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা অপরিকল্পিত খাল খনন ও নালা নর্দমার আবর্জনা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় অধিকাংশ স্থান পানির নিচে ডুবে থাকে। অরক্ষিত ড্রেন, নালা-নর্দমা ও সংস্কারহীন রাস্তার গর্তে পড়ে এই নগরে হরহামেশা অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। রাস্তাঘাট পয়ঃনিষ্কাশন, সড়ক বাতির বেহাল দশা, ডাস্টবিনে দিনভর ময়লা আবর্জনায় ভর্তি হয়ে পড়ে থাকায় নাগরিক জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। মশার অত্যচারে অতিষ্ঠ নগরবাসী এখন ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এই ব্যাপারে নগরবাসীকে সজাগ ও সচেতন করার কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান। এছাড়া তিনি নগরীর জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদসহ বড় বড় মসজিদের পাশে মৃত ব্যক্তির গোছল কাফনের ব্যাবস্থাসহ ন্যূনতম ২০ জনের লাশ সংরক্ষণে ফ্রিজাপ হাউস নির্মাণেরও দাবি জানান।
এস এম নুরুল হক মেয়রের উদ্দেশে বলেন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত চট্টগ্রামবাসী ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরপিতা হিসাবে আপনার প্রতি আমাদের অনুরোধ নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত, প্রাচ্যের রানী বন্দর নগরীকে বিশ্বমানের শহরে পরিণত করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করার প্রতি বিনয়ের সাথে আহবান জানাই। বিজ্ঞপ্তি