ঢাকা প্রতিনিধি
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আদালতে সাজা কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে জিয়ার আমলে সামরিক আদালতে দন্ডপ্রাপ্তদের কেন দেশপ্রেমিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং দন্ডপ্রাপ্তদের পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া রুলে দন্ডিতদের সন্তানদের যোগ্যতা অনুয়ায়ী সরকারি চাকরি দেওয়ার বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, চিফ অব আর্মি স্টাফ, চিফ অব এয়ার স্টাফকে চার সপ্তাহে মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এই রুল জারি করেন।
১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেই সামরিক আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সাইদুর রহমানের ছেলে মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনসহ বিমান বাহিনীর ১৪ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাসহ ৮৮ পরিবারের পক্ষে ২০১৯ সালে এই রিট আবেদনটি করা হয়।
আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সঙ্গে ছিলেন মো. মতিউর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
সেনা ও বিমান বাহিনীর ওই ৮৮ সদস্য স্বাভাবিকভাবে অবসরে গেলে সেই সময় পর্যন্ত যে বেতন, অন্য সব সুবিধা ও পেনশন তারা পেতেন, তা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি ১৯৭৭ সালের ‘মার্শাল ল রেগুলেশনে’ গঠিত ওই ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করা ও দন্ডকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দন্ডিতদের দেশপ্রেমিক হিসাবে বিবেচনার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন। ১৯৭৬ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। তার পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও নেন। সেনাপ্রধান জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলেছিল, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদন্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে এ রকম এক বিচারে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত কর্নেল আবু তাহেরের বিচার ইতোমধ্যে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
তার আগে আরেক রায়ে হাই কোর্ট বলেছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ ছিল সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি।
রিট আবেদনে একটি সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়; তাতে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংগঠিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার জন। নিখোঁজ হন অসংখ্য।