মনিরুল ইসলাম মুন্না
নগরীর কাজির দেউরিস্থ আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় ছুটির দিনে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন স্টলে দেয়া হচ্ছে ডিসকাউন্ট এবং বিভিন্ন আইটেম একদামে বিক্রি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলায় এসব দৃশ্যের দেখা মেলে।
মোহাম্মদ আলী রাশেদ নামে এক দর্শনার্থী জানান, ‘মেলায় এলে সব ধরনের পণ্য একই জায়গায় পাওয়া যায়। গৃহস্থালী, কসমেটিক্স, ঘরসাজানি, কাপড়-চোপড়, জুতা-স্যান্ডেল, বাহারি আইটেমের খাবার ইত্যাদি। ওভারঅল বলতে গেলে মোটামুটি ভালোমানের পণ্যসামগ্রী এসেছে মেলায়। ঘোরাঘুরি করে যা বুঝলাম, কয়েকটি স্টল আছে একদামের। বাকিগুলোতে দর কষাকষি করে কিনতে হচ্ছে। আজকে (শুক্রবার) ছুটির দিন। মেলায় দর্শনার্থী বেশি আসায় দোকানিরা বেশি কথা বলতে চাচ্ছেন না। একদাম বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দেখি কয়েকদিন পর আবার আসবো, তখন হয়ত দাম আরও কিছুটা কমতে পারে।’
দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে দোকানপাট খুললেও দর্শনার্থী বাড়ে বিকেল থেকে। সন্ধ্যা হতে না হতেই মেলা প্রাঙ্গনে ভিড় বাড়তে থাকে। শুক্রবার বা ছুটির দিন হলে তো আর কথায় নেই। বিক্রেতাদের আশা, এবারের মেলায় তারা কাক্সিক্ষত পরিমাণ পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
মেলায় পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও আছে থ্রি-পিস, জুতা, বিভিন্ন ধরনের শাড়ি, নকশি কাথা, কাশ্মীরি শাল ও কার্পেটসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ। এছাড়া শিশুদের খেলনা, প্লাস্টিক পণ্য, কসমেটিকস পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ হরেক রকম পণ্য। প্রতিবারের মতো এবারও পসরা সাজিয়ে বসেছেন সিরাজ ভাইয়ের পঞ্চরসের আচার, রূহানি আচার ও শ্বশুরবাড়ির পিঠা। শ্বশুড়বাড়ির পিঠার স্টলের সামনে পিঠাপ্রেমীরা পিঠা খেতে ব্যস্ত। সন্ধ্যায় সেখানে দোকানিরা পিঠা তৈরি করে গরম গরম বিক্রি করছেন। এখানে রয়েছে দুধ ভাপা পিঠা, দুধ চিতই, নারকেলের পুলি, পাকন, পাটিসাপটা, পুলি, সাজের নাস্তাসহ বাহারি আইটেমের পিঠা।
শুধু পিঠার দোকান নয়। রয়েছে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থাও। কয়েকটি রাইডও রয়েছে পূর্ব প্রান্তে। পুরুষদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট, কোট, ব্লেজারসহ নানা শীতের কাপড়। ঘরের মেঝের পাপোষ থেকে শুরু করে বিশাল এলইডি টিভি, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, কাপড়ের ইস্ত্রিসহ নানা পণ্যের সমাহার।
মরিয়ম বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে চোখ পড়লে মনে হয় এটাইতো প্রয়োজন। এখানে গৃহস্থালী টুকিটাকি সব জিনিসই পাওয়া যায়। তাই যেটা প্রয়োজন সেটা নিয়ে নিই।’
মেহনুর জান্নাত নামে আর এক নারী বলেন, ‘প্রতিবছর বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন নতুন পণ্যের পাশাপাশি ব্যতিক্রমী পণ্য মিলে এ মেলায়। এ কারণে আমরাও অপেক্ষায় থাকি কখন বিজয় মেলা আসবে।’
সিরাজ ভাইয়ের পঞ্চরসের আচারের দোকানের স্বত্বাধিকারী জুয়েল বলেন, ‘অন্যান্য দিন কিছুটা সময় থাকলেও শুক্রবার একটু বেশি ভিড় থাকে। অন্য দিন ৫ হাজার টাকার বিক্রি হলে ছুটির দিনে ২০ হাজার টাকা বা তারও বেশি বিক্রি করতে পারি।’
থ্রি-পিছ দোকানি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এখন আমরা একদামে পণ্য বিক্রি করছি। শেষদিন প্রতিটি পণ্যে আরও ৫০ টাকা ছাড় দিয়ে সব কাপড় বিক্রি করে ফেলব। ন্যূনতম মুনাফা ধরে রেখে পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করব। এতগুলো জিনিস যখন আনলাম, সেগুলো তো আর উল্টো নিয়ে যেতে পারব না।’
আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় প্রায় ১৮০টি ছোট-বড় স্টল রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ হেল্প ডেস্ক করা হয়েছে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা রাখা হয়েছে। ষ পৃষ্ঠা ৭, কলাম ৬.
ষ শেষ পৃষ্ঠার পর
একটা অ্যানাউন্সমেন্ট কক্ষ করা হয়েছে, যাতে কেউ হারিয়ে গেলে সহজে খুঁজে বের করা যায়।
মেলা কমিটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ পূর্বদেশকে বলেন, ‘মেলায় প্রবেশ একদম ফ্রি। কোন টিকেট সিস্টেম রাখা হয়নি। কারণ আমরা এখানে মুনাফা করতে চাই না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়টা স্মরণ করাই আমাদের উদ্দেশ্য। এখানে বাণিজ্যটা বিষয় না, অংশগ্রহণ বড় বিষয়। কৃষ্টি, সংস্কৃতি, লোকজ ও হারিয়ে যাওয়া পণ্য নিয়ে মেলা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে দোকান বরাদ্দ থেকে যা আয় হবে তা বিভিন্ন খাতে খরচ হয়ে যাবে। যেমন মাঠভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে আয়কৃত টাকার বেশিরভাগ চলে যাবে। বাকি যা থাকবে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় হয়ে থাকে। কেউ অসুস্থ হলে বা কারও বিশেষ কাজে প্রয়োজন হলে এখান থেকে প্রদান করে থাকি। এছাড়া আমরা ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দিয়েছি।’