আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনের আবাসন খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি এভারগ্রান্ডে গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়া ঘোষণা করে এ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার আবেদন করেছে মার্কিন দেউলিয়া সংক্রান্ত আদালতে। চ্যাপ্টার ফিফটিন নামের আইনের এক অধ্যায় অনুযায়ী দেউলিয়ার ঘটনার সঙ্গে যখন অন্য কোনো দেশের নাম যুক্ত হয় তখন ওই আদালত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
এই আইন মার্কিন আদালত, ঋণখেলাপি এবং আন্তঃসীমান্ত দেউলিয়া কার্যক্রমে জড়িত অন্যান্য দেশের আদালতের মধ্যে সহযোগিতার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ চ্যাপ্টার-ফিফটিনের মাধ্যমে কোন বিদেশি কোম্পানির মার্কিন সম্পদকে রক্ষা করা হয় যাতে কোম্পানিটি তার ঋণ পরিশোধের বিষয়ে ঋণদাতাদের সাথে আলোচনা করতে পারে। প্রচুর পরিমাণ ঋণের জন্য ২০২১ সালেই চীনের এই বিশাল রিয়েল এস্টেট কোম্পানি খেলাপি হয়। এর প্রভাবে মারাত্মক সংকট তৈরি হয় চীনের অর্থনীতিতে। এখন নতুন সংকটে আবাসন খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট লিখেছে, ‘যে কোনো মূল্যে প্রবৃদ্ধির’ নীতিতে গত তিন দশক ধরে অভাবনীয় সমৃদ্ধি লাভ করেছে চীন। কিন্তু এসব বড় বড় কোম্পানির দেউলিয়া হওয়ার ঘটনা এখন সেই নীতির হুমকি তুলে ধরছে। বছর দুই আগে ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ঋণের ওপর এবং আবাসন খাতে বেইজিং ব্যবস্থা নিলে খেলাপির দিকে চলে যায় কোম্পানিগুলো। এভারগ্রান্ডের পতনের পর থেকে কাসিয়া, ফ্যান্টাসিয়া ও শিমাও গ্রæপসহ চীনের আরও বেশ কয়েকটি বড় ডেভেলপার কোম্পানিও ঋণ খেলাপি হয়েছে।
সম্প্রতি আরেকটি চীনা রিয়েল এস্টেট জায়ান্ট কান্ট্রি গার্ডেন সতর্ক করে বলছে, তারা ঋণ ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপের কথা ভাবছে। এতে অনুমান করা হচ্ছে, এই কোম্পানি ঋণ পুনর্গঠনের কথা ভাবছে। একসময় আবাসন খাতে চীনা কোম্পানিগুলো রোল মডেল হলেও এখন এই শিল্পে ভয়াবহ সংকটের কারণে চীনের সামগ্রিক অর্থনীতি শ্লথ হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে এভারগ্রান্ডে তাদের ঋণ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল। চীনের ২৮০টি শহরে অন্তত ১ হাজার ৩০০ রিয়েল এস্টেট প্রকল্প রয়েছে এভারগ্রান্ডের। এছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবসা ও থিম পার্কের মত বেশকিছু নন-রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও রয়েছে তাদের।
কয়েক দশক ধরে এভারগ্রান্ডে চীনের সবচেয়ে সফল রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের মধ্যে একটি ছিল। যদিও চীনের অর্থনীতি দ্রæত সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটি ঋণভারেও জর্জরিত হয়ে পড়েছে। আর এখন নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে মার্কিন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। ঋণ পরিশোধে খেলাপি হওয়ার পর এভারগ্রান্ডে তার ঋণদাতাদের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলোচনার কাজ ফের শুরু করছে।
এই গ্রুপের শুধু রিয়েল এস্টেট খাতেরই মোট আনুমানিক ঋণ ছিল ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি।