চার বছরের পুরনো ট্যাবে ‘দ্রুত ফলাফল’

9

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রামে তিন বছর পর আবারও ব্যবহার হচ্ছে ট্যাব। চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ১৯০টি ভোটকেন্দ্রে ট্যাব ব্যবহার করা হবে। ট্যাব ব্যবহার করে কয়েক ঘন্টা পরপর ভোটকেন্দ্রের সচিত্র প্রতিবেদন পাঠানো হবে। পাশাপাশি ভোট গণণা শেষে দ্রুত ফলাফল পাঠাতেও ট্যাবের ব্যবহার হবে। এতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দ্রুত ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হবে। তবে চার বছর আগে কেনা ট্যাবগুলো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় এ পদ্ধতির সুফল আদৌ মিলবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের ১৯০টি ভোটকেন্দ্রে এবার ট্যাব ব্যবহার করা হবে। অনেক সময় ভোট গণণা শেষে গাড়িতে করে ফলাফল নিয়ে আসতে দেরি হয়। এই ট্যাব ব্যবহারের সুবিধা হলো সময়ক্ষেপন না করে দ্রুত ফলাফল পাঠিয়ে দেয়া। পরে এই ফলাফল সমন্বয় করে আমাদের একত্রিত ফলাফল দিতে দেরি হবে না। যত্র দ্রুত কেন্দ্র থেকে ফলাফল পাঠানো যাবে তত দ্রুত ভোট গণনার ফলাফল দেয়া যাবে’।
জানা যায়, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ৪২ হাজার ২০০ ট্যাব নির্বাচন কমিশন ক্রয় করে। তিন বছর গ্যারান্টিতে নেয়া ট্যাবগুলো প্রথমবার পঞ্চম উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় পর্যায়ে সিলেট জেলার সদর উপজেলার ১০টি ভোটকেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার হয়। পরবর্তী প্রতিটি ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ট্যাবের ব্যবহার হলেও কাঙ্খিত সুফল মিলেনি। সেসময় ট্যাব ব্যবহার নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামে সর্বশেষ ব্যবহৃত হয় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচনে। যদিও সেই নির্বাচনে ট্যাব ব্যবহার নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। এরপর থেকে আর কোনো নির্বাচনে ট্যাবের ব্যবহার হয়নি। এমনকি গত বছর অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ট্যাবের ব্যবহার হয়নি।
তবে ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কর্মরত থাকা এক কর্মকর্তা জানান, মূলত নির্বাচন ব্যবস্থাকে গতিশীল করতেই ট্যাবগুলো কেনা হয়েছিল। শুরুর দিকে এগুলো ব্যবহারে কিছু সফটওয়্যারজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ইন্টারনেটের গতিও ছিল কম। যে কারণে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। পরে ঠিক হয়ে যায়। তবে পুরনো হওয়ায় এগুলো কতটুকু ভালো আছে তা পরীক্ষা করা উচিত।
চট্টগ্রামের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘দ্রুত ফলাফল পাওয়ার সুবিধার্থে চট্টগ্রাম-৮ আসনে ট্যাবের ব্যবহার হবে। এর আগের চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনেও ট্যাবের ব্যবহার হয়েছিল। আমাদের কাছে যে ট্যাবগুলো সংরক্ষিত আছে সেগুলোই ব্যবহৃত হবে। ট্যাবগুলো ভালোই আছে। আমাদের লোকজন সেগুলো দেখেছে। ট্যাব ব্যবহার করে কয়েক ঘন্টা পরপর ভোটকেন্দ্রের চিত্র আমাদের কাছে চলে আসবে। এতে ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ সম্পর্কেও জানা যাবে’।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, আগে থেকেই দুই হাজার ট্যাব নির্বাচন অফিসে আছে। সেগুলো ঠিক আছে কিনা দেখতে একটি টেকনিক্যাল টিম আসার কথা রয়েছে। যে ট্যাবগুলো আছে সেখান থেকে বাছাই করেই আমরা ১৯০টি প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের হাতে দেয়া হবে। ভোট শেষ হওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই ফলাফল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে। প্রিজাইডিং অফিসারদের মাঝে বিতরণ করা ট্যাবে সেন্টার রেজাল্ট ডিসক্রিমিনেশন অ্যান্ড রিপুটিং (সিআরডিআর) অ্যাপ্লিকেশন থাকবে। প্রত্যেক প্রিজাইডিং অফিসারকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে, যা দিয়ে অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করা যাবে। এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রিজাইডিং অফিসার কয়েক ঘন্টা পর পর ভোটকেন্দ্রের প্রতিবেদন পাঠাবেন। পরবর্তীতে ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনার পর প্রাপ্ত ফলাফল ও বিবরণী ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন। একই সাথে ট্যাবের অ্যাপ্লিকেশনে প্রাপ্ত ফল এন্ট্রি করবেন এবং প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরকৃত ফল বিবরণী ছবি তুলে ফলাফলের সাথে সংযুক্ত করে পাঠাবেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরনদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৩ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ জন। ভোটকেন্দ্র ১৯০টি, ভোটকক্ষ ১৪১৪টি।