চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর জনপ্রতিনিধিত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান। নাগরিক অধিকার ও তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজ। সংগত কারণে এসব কাজ করতে হয় সরকারি নিয়ম মেনে। আর্থিক সংগতির মধ্য থেকে। বিধি অনুযাীয় কর্পোরেশনের নিবন্ধিত ঠিকাদারদের মাধ্যমে নগরবাসীর সেবা কার্যক্রমগুলো নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং ঠিকাদাররাও চসিকের সেবামূলক কার্যক্রমের সহযোগী । তাদের উদ্দেশ্য যদিও বাণিজ্যিক এরপরও চসিক ও নগরবাসী তাদের কাছে ভালো আচরণ প্রত্যাশা করে। কিন্তু সম্প্রতি একটি প্রকল্পের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে কয়েকজন ঠিকাদার মিলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, তা উদ্বেগজনক। জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে গৃহীত আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পরিচালক হিসাবে প্রকৌশলী গোলাম ইয়জদানীকে গত ১৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ নিয়োগ দেয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইসহ সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপযুক্ত ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন বলে জানা যায়। ইয়াজদানীর এ ধরনের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় কতেক স্বার্থন্বেষী ঠিকাদার। জানা যায়, ইতোপূর্বে গোঁজামিলের মাধ্যমে কাগজপত্র দিয়ে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেওয়া চক্রটি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। চক্রটি কয়েকদিন আগে কর্পোরেশনে অস্ত্রের মহড়াও দেয়। এ ধারাবাহিকতায় গত রবিবার কক্ষ ভাঙচুরসহ প্রকল্প পরিচালককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, যা কোনোমতেই বরদাশত করা যায় না।
টেন্ডারবাজদের অপতৎপরতা ও সহিংস আচরণের খবর মাঝেমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতে দেখা যায়। বিভিন্ন সরকারি-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় সশস্ত্র সংঘবদ্ধ চক্র নানারকম অবৈধ পন্থা অবলম্বন ছাড়াও কার্যাদেশ হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে অনেক সময় খুন-খারাবির ঘটনা পর্যন্ত ঘটায়। আলোচ্য ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলাকারীদের একজন একটি কলেজের ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বশীল সম্পাদকও ছিলেন। সাবেক এ ছাত্রনেতাসহ হামলাকারী চক্রটি করপোরেশেনে বর্তমান মেয়রের উপর নানাভাবে চাপ দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে আসলেও মেয়র নীতির প্রশ্নে তাদের নিয়মের বাইরে অন্যায়ভাবে কাজ দিতে রাজি ছিলেন না। ফলে হামলাকারীদের ক্ষোভ গিয়ে ঠেকে প্রকল্প পরিচালকের উপর। আমরা মনে করি, মেয়র মহোদয় তার নীতির অবস্থান থেকে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মত সহযোগিতা করবেন।
আমরা জানি, সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি থেকে দেশে ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য, শুধু পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়; নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতি ও নৈরাজ্য থেকে দূরে থাকার মানসিকতা তৈরি হওয়াও জরুরি। আশঙ্কাজনক হলো, দেশে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে গড়ে ওঠা লুটপাটের সংস্কৃতি রাষ্ট্রের মূল ভিত নড়বড়ে করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি, পেশিশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহারসহ দখল-নৈরাজ্য দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অতীতেও ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীদের নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ছিল। কিন্তু প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলার মত জগন্য ঘটনা ঘটছে বলে মনে হয় না। আমরা মনে করি এ জাতীয ঘটনা চসিকের ভাবমুর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করবে। সুতরাং হামলাকারী ‘দরপত্র-চক্র’ তথা নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের দ্রæত শাস্তির আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে-এমনটি প্রত্যাশা সকলের।