চমেক হাসপাতালে বার্ন ইউনিট অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আগাম সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি

11

সীতাকুণ্ড দেশের অন্যতম শিল্প এলাকা। এখানে গুরুত্বপূর্ণ অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কয়দিন আগে সীমা অক্সিজেন প্লান্টে অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। সীমার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পূর্বে গতকাল আবার সীতাকুণ্ডে তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। যাতে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় সেনা ও নৌবাহিনী অগ্নি নির্বাপন কাজে অংশ গ্রহণের খবর আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় যাতে ফায়ার সার্ভিস ৭/৮ ঘণ্টা চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। সকালে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড নেভাতে রাতে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেয়। এখন শুষ্ক মৌসুম। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেশি। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থপনা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কেন উদাসীন তা আমাদের বুঝে আসে না। কুমিরার তুলা গুদামের অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। হয়তো দেখা যেতে পারে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্বে হয়তো অন্যকোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগার খবর আমরা পেয়ে যাবে। আমরা এমনটা আশা করি না। কেন বারবার দেশে অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটবে ? এর পেছনে অসচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয় অনেকাংশে দায়ী। বাড়িঘর, দোকান-পাট, মার্কেট, শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে অগ্নিকাÐের মূলে যেসব বিষয় বারবার তদন্তে উঠে আসে তা হলো (১) সংশ্লিষ্ট জনদের অবহেলা ও অসচেতনতা, (২) বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট, লাকড়ি বা গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ইত্যাদি (৩) নাশকতা, সম্প্রতি নাশকতার প্রমাণ খুব একটা নেই। এ সকল সমস্যা প্রতিরোধে সর্বক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সংহত করা গেলে অগ্নিকাÐ নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম। আমরা বাসাবাড়ি, দোকান-পাট, মার্কেট, শিল্প কারখানাতে অগ্নি নির্বাপনে যথাযথ ব্যবস্থার ব্যাপারে সচেতন হচ্ছি না। শিল্পকারখানাতে অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রাখছি না। বৈদ্যুতিক সার্কিটগুলোকে ব্যক্তিগত বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়মিত চেক করছি না। কাঠের চুলা কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করছি না। চুলার আগুন রান্নার পর নিয়মিত নিভিয়ে দেয়ার অভ্যাস আমাদের এখনো গড়ে ওঠেনি। গ্যাস লাইনে ত্রæটি সারাতে অবহেলা রয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ ও গ্যাস ডিস্ট্রিভিউশন কোম্পানিও এ বিষয়ে স্বাভাবিক ভাবে নিয়মিত পরিচর্যা করতে দেখা যায় না। যে কারণ অগ্নিকাÐের বহু ঘটনার জন্ম দেয়। সর্বক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং কোম্পানি বা সংস্থার অবহেলার কারণেই অধিকাংশ অগ্নিকাÐের সৃষ্টি হয়। একমাত্র জনসচেতনতা এবং আগাম সতর্কতাই দেশের অগ্নিকাÐের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের পূর্বশর্ত। সীতাকুÐের কুমিরার তুলার গুদামে আগুন লাগার কারণ হয় তো তদন্তে উঠে আসবে। তাতে এ সংঘটিত অগ্নিকাÐের ক্ষয়ক্ষতি ফিরে আসবে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তার কারণ অনুসন্ধান করার চেয়ে আগেভাগে অগ্নিকাÐ না ঘটার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হলে অগ্নিকাÐ ঘটনা ঘটবে না। তুলার গুদাম খুবই স্পর্শকাতর গুদাম। যাতে আগুন লাগলে কিছুই অবশিষ্ট থাকার সম্ভাবনা থাকে না। একই ভাবে ক্যামিকেল রাখার জায়গায় অগ্নিকাÐে ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব স্থানে অগ্নিকাÐ ঘটলে নিয়ন্ত্রণ বা নেভানো সম্ভব হয়ে ওঠে না, সেসব স্থানে পূর্ব থেকে শক্ত নির্বাপন ব্যবস্থার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। আমরা চাইনা দেশে কোথাও অগ্নিকাÐ ঘটুক। অগ্নিকাÐ জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন অগ্নিদুর্ঘটনার ফলে জনসাধারণের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আধুনিক বার্ন ইউনিট স্থাপনের দাবি জোরালো হয়। যার প্রেক্ষিতে সরকার চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠার কথাসহ আলাদা বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের কথা ভাবতে শুরু করে। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার অন্য এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় দ্রæত চমেক এ ১৫০ শয্যার একটি বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠার সুসংবাদ এসেছে। অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় চট্টগ্রাম এগিয়ে যাক এমন আশা সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর। এছাড়া চট্টগ্রামে সরকার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বার্ন হাসপাতাল স্থাপন করুক এটা চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা।