রাহুল দাশ নয়ন
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী জনসভায় উপস্থিত থাকবেন এমন ঘোষণার পর থেকেই ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির চট্টগ্রামের নেতারা। এদিন বড় ধরনের শোডাউন দিতে প্রস্তুতি চলছে। সমাবেশকে উপলক্ষ করে গতকাল সন্ধ্যায় মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের ছয় শীর্ষ নেতা বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৯ নভেম্বর (বুধবার) কাজির দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে যৌথ প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিনিধি সভায় দুই জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের পূর্ণঙ্গ কমিটি, নগরের ৪৩ ওয়ার্ড ও ১৫ থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আহব্বায়ক-যুগ্ম আহব্বায়ক, জেলার ১৯০টি ইউনিয়ন, ১২টি পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আহব্বায়ক-যুগ্ম আহব্বায়ক, ১৫ উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের আট অঙ্গ ও দুই সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা মিলে প্রায় আট শতাধিক নেতা উপস্থিত থাকবেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘৯ নভেম্বর আমরা যৌথ প্রতিনিধি সভা করবো। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা দিকনির্দেশনা দিবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভাটি স্মরণকালের বৃহত্তম সভা করতে চাইছি। এই সমাবেশকে সফল করতে প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় ওয়ার্কিং কমিটির সভা করা হবে।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এ জনসভাটি চট্টগ্রামের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে নিয়েছেন দলটির নেতারা। এর আগে চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কথামতো চট্টগ্রামের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এসব প্রকল্পে চট্টগ্রামের দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের উন্নয়নে আরও ঘোষণা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। যা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের মানুষের কাছে নির্বাচনী বার্তা হিসেবে কাজে লাগাতে পারবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে আমরা মহানগর ও জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা বসেছিলাম। সেখানে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৯ নভেম্বর আমরা যৌথ প্রতিনিধি সভা করবো। সেখানে উপস্থিত থাকবেন তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতারা। এছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। এ সভার মধ্যদিয়েই প্রধানমন্ত্রীর জনসভার সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু হবে। ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিবেন। যে ভাষণে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও নির্বাচনের ইঙ্গিত থাকবে।’
গত ১২ অক্টোবর বিএনপি চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জনসভা করে তাদের কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। বিএনপির এ জনসভায় ব্যাপক লোকসমাগম হয়েছে প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছে। লোকসমাগম নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্যও দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগ এবার মুখের কথা বাদ দিয়ে রাজপথেই বিএনপির এমন বিভ্রান্তির জবাব দিতে তৎপর। বিএনপি যে মাঠে জনসভা করেছে সেই মাঠেই জনসভা করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে চাইছেন আওয়ামী লীগ। যে কারণে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে প্রথম জনসভাটি সফল করতে পলোগ্রাউন্ডকেই বেছে নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এলক্ষ্যে চট্টগ্রামের নেতাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন।
গতকাল (শনিবার) ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে ১০ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে হবে আওয়ামী লীগের জনসভা। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিবেন।’ দলীয় সাধারণ সম্পাদক এমন বক্তব্য দিরেও এখনই সংখ্যার হিসেবে যেতে রাজি নয় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুস সালাম। তিনি বলেছেন, ‘জনসভায় মানুষের সংখ্যা কত হবে সেদিনই দেখা যাবে। আপাতত বলছি, স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সভা হবে পলোগ্রাউন্ডে।’
এদিকে গতকাল (শনিবার) রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাতেও প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সভায় উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগের নেতারা প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে যাতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটে সে ব্যবস্থা করতেই নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন। সভায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিন ছাড়াও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও উপস্থিত ছিলেন।