চট্টগ্রামে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ মশা নিধনের কার্যকর উদ্যোগ চাই

6

চট্টগ্রামে প্রচলিত আছে মশা মারতে কামান দাগা। নগরীতে যখন মশার উপদ্রব বেড়ে যায়, তখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মশা মারতে কামান দাগানোর মত বড়ধরনের কার্যক্রম (ক্যাশ প্রোগ্রাম) হাতে নিতে দেখা যায়। সংবাদপত্রে এ নিয়ে ছবিসহ প্রতিবেদন ছাপানো হয় বটে, মশার জাত মরতে দেখা যায় না। বর্ষা মৌসুমের পর ভাদ্রের বিদায় বেলায় গত কয়েকদিন মুষলধরে বৃষ্টি হয়েছে নগরীতে। এ বৃষ্টিতে আবারও নালানর্দমা, খাল-বিল, জলাশয় ডুবে যায়, কানাখন্দক, পরিত্যক্ত টায়ার, ফুলের টব, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদিতে পানি জমেছে। এ সুযোগে এডিশ মশা বাসা বেঁেধ লার্ভা সৃষ্টি করে মশার প্রজনন ঘটাচ্ছে, যা থেকে ভয়াবহ ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সংবাদপত্রে দেখা যায়, গত একমাসব্যাপী নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এ নিয়ে সিভিল সার্জন নগরবাসীকে সতর্ক করার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। চসিককেও দেখা গেছে মশা মারার কামান নিয়ে দৌড়তে। কিন্তু কিছুতেই কমছেনা মশা। বরং দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে ডেঙ্গুর উপদ্রব। সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নয়জন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছেন। এ নিয়ে মোট গত দুই সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ২৮৫ জন। তাদের মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৭২জন। এ সপ্তাহের প্রথম দিন সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে চট্টগ্রামে জরুরি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলীর নেতৃত্বে নগরীর দামপাড়া ও বেটারীগলি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে বিভিন্ন বাড়ির ছাদবাগান ও নির্মাণাধীন ভবনে অভিযানকালে কয়েকটি বাড়ির ছাদবাগানের ফুলের টব ও নির্মাণাধীন ভবনের নিচে এডিস মশার বংশবিস্তারে জমাটবদ্ধ পানির উৎস পাওয়া যায়। এ সময় পাঁচ ভবন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা রুজুপূর্বক ১৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিতে জমাট পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় এবং ভবিষ্যতে পানি জমা থাকলে তা দ্রæত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভবন মালিকদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে জুন মাস থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। কিন্তু এ বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৫ জন, ফেব্রæয়ারি মাসে একজন। এরপর টানা তিন মাস চট্টগ্রামে কোনো ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি। কিন্তু জুন মাসে আক্রান্ত হন ১৭ জন। জুলাই মাসে তা বেড়ে ৩৪ জনে গিয়ে দাঁড়ায়। আর আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬ জন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৫ জন।
জেলা কীটতত্ত¡বিদ ইনতেজার ফেরদৌস বলেন, ‘সবাইকে ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। চট্টগ্রামে গত কিছুদিন ধরেই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এ সময়ে থেমে থেমে যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে এডিস মশার প্রজনন ঘটছে। আর তা থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’ এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন স¤প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের প্রতি বিশেষ যতœশীল হতে হবে। আমরা লক্ষ করে আসছি, ডেঙ্গু রোগ শুধু নগরীতে বিস্তার ঘটছেনা, বিভিন্ন উপজেলা ও মফস্বল শহরেও এর উপদ্রব বেড়েছে। এর মূল কারণ, বর্ষা এবং পরবর্তী ভাদ্র মাসের বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি আর অপরিচ্ছন্নতা থেকে এডিশ মশা বংশবিস্তার করছে। যার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে মশার ওষুধ ছিটাতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে, নালা-নর্দমা, জলাশয়গুলো পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বাস্তবে লোক দেখানো কিছু কর্মসূচি ছাড়া মশার বংশবিস্তারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে যারা মশার ওষুধ ছিটান তাদের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন আসে। তারা প্রতিটি ওয়ার্ডের সব জনপদে বা পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ওষুধ ছিটান না, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আমরা আশা করি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এ বিষযে তাদের নজরদারী বাড়াবে। সময় থাকতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে পরে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে। যা অতীতে আমরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে দেখেছি।