আসহাব আরমান
চট্টগ্রামের ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত ২ দিনে ডেঙ্গুর আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর মশক নিধন ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৯ জন। তবে সেপ্টেম্বর মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৪২ জন। এর মধ্যে ১৮৯ জনই চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দা। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০৫ জন। এদিকে গত ২ দিনে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৩ জনই নারী। এদের বয়স ৪০ বছরের উর্ধ্বে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর নগরীর পাহাড়তলীর বাসিন্দা শিউলি রানী (৪০) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি হন। প্যাথলজিক্যাল টেস্টে তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। পরে বুধবার রাতে তার মৃত্যু হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর একই এলাকার খুরশিদা বেগম (৭০) অসুস্থ অবস্থায় একই হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সেখানে তার মৃত্যু হয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর মোগলটুলী বাইলেইনের নুরুল ইসলাম সওদাগর বাড়ির দিলআরা বেগম রেশমী (৫০) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে ভর্তি হন। বুধবার তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু হলো। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে চমেক হাসপাতালে আরও এক রোগীর মৃত্যু হয়।
চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সাহেদা আখতার জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চমেক হাসপাতালে বর্তমানে ২৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। গতকাল (বুধবার) দুপুর ও রাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের ডেঙ্গু ছাড়াও আগে থেকে হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ ছিল। এ ছাড়া ৬ জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ২০২১ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছিলেন, নগরীর প্রায় ১৫টি স্পটে এডিসের লার্ভার সন্ধান মিলেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৫১টি স্পট এবং হাটাহাজারী উপজেলাধীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি স্থান থেকে জমে থাকা পানি সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এর অধিকাংশ স্পটই চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় বলে জানিয়েছিলেন তারা। একইসাথে মশক নিধনে কার্যকর ওষুধ প্রয়োগের গবেষণা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয়নি। বরাবরের মতোই মশা মারতে ব্যর্থ চসিক। ফলে নগরজুড়ে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করে।
ঘুম ভাঙলো চসিকের : এদিকে নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর সচেতনতা কার্যক্রম ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ক্যাম্পেইনে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম বলেন, নোংরা ও অপরিষ্কার জায়গা, জমাটবদ্ধ পানি, ডোবা ও ঝোপঝাড় এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে জমাটবদ্ধ পানিতে এডিস মশা জন্ম নেয়। এডিস মশা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে ৪৮ জন মারা গেছেন। মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৮৭৫ জন। বর্তমানে ১ হাজার ৫২৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৪৬ জন ঢাকার বাইরের। এ পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ২৯৮ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।