সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে গণফোরামের প্রার্থী সুলতান মো. মনসুর আহমেদ ও মুকাব্বির খান শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বারণ মানবেন না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ফরম বিক্রির শুরুতে সাংবাদিকদের সামনে আসেন ওবায়দুল কাদের।
নেতা-কর্মীরা বিএনপি ছাড়তে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা এখন কি করবে এটা খুঁজে পাচ্ছে না। দল থেকে পদত্যাগ করছে, অনেকেই করবে। দল থেকে সরে যেতে শুরু করেছে। এদিকে ঐক্যফ্রন্ট থেকে দুইজন সংসদ সদস্যকে তারা শপথ নিতে বারণ করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা কি শুনবে নেতৃত্বের বারণ? আমার তো মনে হয় না’। খবর বিডিনিউজের
গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে জয়ী হন সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান। ওই নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে ঐক্যফ্রন্ট ও তাদের শরিক বিএনপি। ‘নির্দলীয়’ সরকারের অধীনে পুনঃভোটের দাবি জানানো বিএনপির নির্বাচিত ছয় নেতাও শপথ নেবেন না বলে দলটির নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন। তবে গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
গত বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন জানিয়েছিলেন, দুই নেতাকে শপথ নিতে বারণ করা হয়েছে। এরপরও অবশ্য ‘সময়মতো’ শপথ নেওয়ার কথা বলেছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর। ভোটে জয়ী গণফোরামের দুই নেতার সঙ্গে ‘কথা হয়েছে’ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের বক্তব্য- ‘জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা জনগণের হয়ে সংসদে কথা বলতে চাই’ এরকম মনোভাব তাদের মধ্যে আছে। এই অবস্থায় তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না করার যে সিদ্ধান্ত, সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর নাও হতে পারে।
ভোটে জয়ী বিএনপি নেতাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম যে নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের চাপের মুখে কতদিন শপথ না নিয়ে থাকতে পারবেন এটাও ভেবে দেখতে হবে। অথবা কৌশলগত কারণে পরবর্তিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে’।
বিএনপি না আসলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থিতার অভাব হবে বলে মনে হচ্ছে না। এটা তো জাতীয় নির্বাচন না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী অনেক থাকবে। তবে এখানে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ একেবারেই কম। বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও অনেক দলই নির্বাচন করবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা অফিসিয়ালি, দলীয়ভাবে তারা বলেছে। কিন্তু ঢাকা উত্তর দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে তাদের ওয়ার্ড পর্যায়ে অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। কাউন্সিলরে দলীয় প্রতীক নেই, তারা কিন্তু নির্বাচনে আছে। তারা একেবারে মাঠে নেই এ কথা বলা যাচ্ছে না। এখন উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিতে পারে, দিলে অবাক হবার কিছু নেই। আমাদের সব কিছুই মাথায় আছে, রাখতে হচ্ছে’।
বিএনপি কোনো ধরনের কৌশল নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘রাজনীতিতে এসব কৌশল, কূট কৌশল থাকে। সবাই সবারটাই মাথায় রাখে। বিএনপি এমন কি করতে পারে এটাও আমরা মাথায় রাখছি। তারা ওপেনলি মাঠে থাকছে না, আবার ভেতরে ভেতর মনোনয়ন পত্র জমা দিচ্ছে’।
বিএনপির কর্মসূচি মোকাবেলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন যাকে বলে, সেটা গণআন্দোলন। গণআন্দোলন করার মতো অনেক ইস্যু তাদের হাতে ছিল। যেমন ধরুন বেগম জিয়া যখন গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেল, বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার মতো সেনসেটিভ ইস্যু তাদের দলের জন্য ছিল। এ ধরনের ইস্যুকে যারা কাজে লাগাতে পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে তারা নতুন করে কোন ইস্যুতে আন্দোলন করবে? তাদের হাতে তো কোনো ইস্যু নেই। আন্দোলনের এজেন্ডা হিসেবে যেটাকে বিএনপি পিক করতে পারে, নতুন সরকারের এমন তো কোনো ইস্যু নেই’।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা এই মূহূর্তে ছত্রভঙ্গ, এলোমেলো একটা দল। পথিক যেমন পথ হারায় নির্বাচনে হেরে সেই দিশেহারা পথিকের মতো এখন বিএনপি। তারা কি করবে না করবে, সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় এখন বিএনপি। তাদের দলের মধ্যে যখন মিটিং বসে তখন ভিন্ন ভিন্ন মত আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি’।