কেন পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন কিম?

13

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করতে পারেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। দুই প্রভাবশালী নেতার মধ্যে অস্ত্র চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সম্ভাব্য বৈঠক তাদের ভালো সম্পর্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়াকে বিশ্বে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে মস্কোর কাছে উত্তর কোরিয়ার গুরুত্ব বাড়ছে। উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সোভিয়েত যুগের মতো নেই। কিন্তু এখন দেশটি মস্কোর কাছ থেকে বন্ধু হওয়ার সুবিধা নিতে চাইছে। যা দুই দেশের জন্যই প্রয়োজন।
সমাজতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়া স্নায়ুযুদ্ধের প্রথম দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে গঠিত হয়েছিল। ১৯৫০-১৯৫৩ সালে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তরকে সাহায্য করছিল। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভশীল ছিল পিয়ংইয়ং। ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যায়। তারপর উত্তর কোরিয়ায় মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল।
পিয়ংইয়ংয়ের নেতারা সব সময়ই বেইজিং ও মস্কোর সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেছেন। শুরু থেকেই রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল কিমের। পারমাণবিক পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়াকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয় চীন-রাশিয়া। তারপর থেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। ২০১৭ সালে সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা করেছে কিমের সরকার। তারপর থেকেই চীন-রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন।
২০১৯ সালে পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন কিম। রাশিয়ার ভ্লাদিভোস্টক শহরে তাদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জুন মাসে রাশিয়ার জাতীয় দিবসে কিম পুতিনকে ‘হাত ধরতে’ বলেছিলেন। সেই বার্তায় পুতিনকে কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন তিনি।
উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতায় চীনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাশিয়া। এতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রস্তাব বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
জুলাই মাসে তাদের সম্পর্ক সা¤প্রতিক সময়ে ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে আসে। ওই সময় রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু পিয়ংইয়ং পরিদর্শন করেন। সফরে তিনি একটি অস্ত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছিলেন। যেখানে উত্তর কোরিয়ার নিষিদ্ধ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। পরে তিনি কিমের পাশে দাঁড়ান। তারপর সামরিক কুচকাওয়াজের সময় সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে স্যালুট করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে উত্তর কোরিয়া মস্কোকে সমর্থন দিয়েছে। ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করা ভূখন্ডের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে দেশটি। পরে এসব ভূখন্ড রাশিয়ায় সংযুক্ত করার পদক্ষেপকেও সমর্থন করেন কিম।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, পিয়ংইয়ং মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। কিন্তু এই অভিযোগের কোনও প্রমাণ মেলেনি। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশ দুটি।
ভ্লাদিভোস্টকের ফার ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আর্টিওম লুকিন একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন, ইউক্রেনে মস্কোর ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনা করেছে। যেখানে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া আারও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।