কাপ্তাই হ্রদে পানির চাপে ঝুঁকিতে ফিশারি বাঁধ

6

এম. কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত পানির চাপে রাঙামাটি শহরের প্রধান সড়কে সংযুক্ত ফিশারি বাঁধটি চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। দেখা দিয়েছে ভাঙনও। বাঁধের ভাঙন রোধে সাময়িকভাবে উভয় পাশে বল্লি (গাছের খুঁটি) গেড়ে পাইরং দেয়া হলেও পানির চাপ না কমলে ঝুঁকিমুক্ত করা যাবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটি শহরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় হ্রদ তীরবর্তী বাড়িঘর তলিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। এতে জেলার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল শনিবার বিকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত পানির চাপে রাঙামাটি শহরের হ্রদবেষ্টিত ফিশারি বাঁধ ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে বাঁধটির বিভিন্ন স্থানজুড়ে ভাঙন ধরেছে। ফলে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধটি ধসে মারাত্মক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত পানির চাপ ছাড়াও বছরজুড়ে রড, বালু, ইট, সিমেন্ট, কংক্রিট, কাঠ, বাঁশসহ প্রচুর মালামাল উঠানো-নামানোর কারণে এ ফিশারিবাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে জানান স্থানীয়রা। ফলে বর্তমানে বাঁধটির মাঝখানে দুই স্থানে বড় ধরনের ধস দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাঁধটি রক্ষায় বল্লি গেড়ে পাইলিং দিচ্ছে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
স্থানীয়রা বলেন, শহরের ফিশারিবাঁধের ওপর যে হারে নির্বিচারে ভারী মালামাল বোঝাই ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকাসহ অসংখ্য যানবাহন ভেড়ানো ও ছাড়া হয়ে থাকে এবং বছরজুড়ে ভারী মালামাল উঠানো-নামানো হয়ে থাকে, তাতে বাঁধটি দিন দিন নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। এসব কারণে বাঁধে ভাঙন ও ধস দেখা দিয়েছে। প্রশাসন পার্কিং নিষেধ করে সাইন বোর্ড টানিয়ে দিলেও এসব কর্মকান্ড বন্ধ হচ্ছে না। এগুলো বন্ধ না হলে এবং স্থায়ীভাবে প্রতিরোধক ব্যবস্থা না করলে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধটি ধসে হ্রদে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এদিকে বাঁধ রক্ষায় সাময়িকভাবে বল্লি গেড়ে পাইলিং দেওয়া হলেও তা স্থায়ী নয় বলে জানিয়েছে প্রশাসন ও সওজ রাঙামাটি কর্তৃপক্ষ। স্থায়িত্বের প্রয়োজনে বাঁধের উভয় দিকে ধারক দেওয়াল নির্মাণ করে বালু দিয়ে ভরাট কাজ চলমান থাকলেও বর্ষা এলে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। ফলে এসব কাজে ধীরগতি হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, রাঙামাটি শহরের ফিশারি বাঁধটি এখন মারাত্মক হুমকিতে। আগেভাগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লোকজন নিয়ে গাছের বল্লি দিয়ে পাইলিং শুরু করেছি। এ মুহূর্তে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। বাঁধটি রক্ষায় উভয় দিকে ধারক দেওয়াল নির্মাণাধীন থাকলেও বর্ষার কারণে তা বন্ধ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি না কমলে কাজ করা যায়নি। এজন্য এটি শেষ হতে যথেষ্ট সময় লাগবে। তাই বাঁধটি রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙামাটি শহরের ফিশারি বাঁধ হুমকিতে পড়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় কাজ চলছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় বাঁধের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে শুক্রবার কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ের মোট ১৬টি গেট খুলে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে অতিরিক্ত পানির চাপ কমানো হলেও বিপদসীমা কেটে যায়নি। গতকাল শনিবার সকালে পানি ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিন বিকাল পর্যন্ত হ্রদে পানির পরিমাণ ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০৭ দশমিক ৯ ফুট উঁচুতে।
কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণক্ষমতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০৯ ফুট উচ্চতায়। কিন্তু ১০৭ ফুট অতিক্রম করলে বিপদসীমা। সম্প্রতি টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ১০৮ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত পানির চাপ বাড়ে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ের মোট ১৬টি গেট খুলে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরবর্তী হ্রদে পানি বাড়ার পরিমাণ কমে আসায় শনিবার সকালে পানি ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে শনিবার বিকাল পর্যন্ত হ্রদে পানির পরিমাণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০৭ দশমিক ৯ ফুট উঁচু ছিল বলে জানান কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুজ্জাহের।