কাপাসগোলার সেই শিক্ষক বরখাস্ত

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রীদের যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মেলায় কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোচিত সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সচিব খালেদ মাহমুদ স্বাক্ষরিক এক অফিস আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। একইসাথে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে আহব্বায়ক করে তদন্ত কমিটি করেছে সংস্থাটি। গতকাল সোমবার অফিস আদেশ সূত্রে জানা যায়, চসিকের শিক্ষা বিভাগে কর্মরত সংযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসহ ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের প্রাথমিক সত্যতা থাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চাকরি বিধিমালা-২০১৯ এর ৫৫ ধারা মোতাবেক চাকরি হতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়।
একইদিন চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত অপর এক অফিসে আদেশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্যের এ কমিটিতে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে আহŸায়ক এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা ও শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমাকে সদস্য করা হয়েছে। তাদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেওয়া নির্দেশনা রয়েছে অফিস আদেশে। একই ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও আরেকটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটিরও তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। একই অভিযোগে ২০১৩ সালে এই স্কুল থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। অভিযোগকারী ছাত্রী দেশের বাইরে যাওয়ায় ম্যানেজ চাকরি পুনর্বহাল করেন। ২০১৮ সালে পূর্ব বাকলিয়া সিটি করপোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থাকাবস্থায় এক মহিলা অভিভাবক এবং ২০১৯ সালে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পুনরায় দায়িত্বে এসে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিষয় নিয়ে তোলপাড় হয়। মূলত বিভিন্ন কারণে অভিযোগকারীর কিছুদিন পর নীরব হয়ে যাওয়ার ফায়দা লুঠেন এ শিক্ষক। শুরু থেকে অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য বিক্ষোভরত ছাত্রীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলাউদ্দিন ছাত্রীদের ছাত্রী হিসেবে দেখতেন না। প্রায়ই মেয়েদের হয়রানি করতেন। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি তোলার সময় তার হাতে ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়েছে। কেউ তার পাশে ছবি তুলতে দাঁড়ালে মাস্ক খুলে ছবি তোলার জন্য উনি জোরাজুরি এবং গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কোনো ছাত্রী প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হুমকি দিতেন। তাছাড়া স্কুলে বিভিন্ন সুবিধা ও শপিং করানোর লোভ দেখিয়ে মেয়েদের বশে আনতেন। যারা ফাঁদে পা দিতেন তাদের ব্ল্যাকমেইল করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছেও পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে অধিকতর তদন্ত করলে এসব বিষয় বেরিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের।
উল্লেখ্য, গত রোববার যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই শিক্ষককে ‘অবরুদ্ধ’ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। স্থানীয় কাউন্সিলরের আশ্বাসে ছাত্রীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলে তাকে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এর একদিন পর গতকাল তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে চসিক। একইসাথে আহমদ মিয়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোমা বড়ুয়াকে কাপাসগোলা স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।