ওয়ার্ড আ.লীগের সম্মেলন ঘিরে আবারও উত্তাপ

61

রাহুল দাশ নয়ন

‘ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করে আসেন। নগরের নেতা আমি বানাবো।’ গত ১৯ ফেব্রæয়ারি নগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে গেলে এমন বার্তা দেন তিনি। এরপর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন ভালো ভালোই শেষ হয়েছে।
বাগমনিরাম ওয়ার্ডের সম্মেলন করতে গিয়ে আবারও উত্তপ্ত নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। আজ গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে এ ওয়ার্ডে ‘একতরফা’ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলেই অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর। তবে দায়িত্বশীল নেতারা পাল্টা বলছেন, বাগমনিরাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বশরকে ডাকলেও তিনি আসেন না। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সবকিছু থেকে দূরে থেকেই সভাপতি হতে তৎপর হয়েছেন।
জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা জোবাইরা নার্গিস খান পূর্বদেশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা দ্রুত সব ওয়ার্ড কমিটি করতে হবে। আমরা সেভাবেই এগুচ্ছি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বশরকে সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় বারবার ডাকলেও উনি আসেন না। নোমান ভাই ফোন করেছিলেন, ছেলে ধরেছিলেন।এরপরও উনাকে আমরা সম্মেলনে আসতে বলেছি। এখন যদি উনি পদ পেতে চান, তাহলে তো সম্মেলনে আসতে হবে। সম্মেলনে না আসলে উনি সভাপতি কীভাবে হবেন?
বাগমনিরাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বশর পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি ২৭ বছর ধরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। দুইদফা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আমি সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় আমাকে দূরে রেখে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আমি সাধারণ সম্পাদক হলেও আমাকে সম্মেলনের বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। শেষ বয়সে আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়নি। সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে একদিনে তিনটি ইউনিট কমিটি করা হয়েছিল। যে কমিটিগুলোতে জামায়াত-বিএনপির লোকজন এসেছে। আমি অবৈধ সম্মেলনে না যেতে আমার কর্মী সমর্থকদের বলেছি। লেনদেনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিশ্চিত করা হয়েছে।’
দলীয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের নভেম্বরে নগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ইউনিট সম্মেলন শুরু হয়। একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। প্রথমদিন বাগমনিরাম ওয়ার্ডের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও সেটি কেন্দ্রের নির্দেশে স্থগিত হয়ে যায়। এরপর নগর আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। দীর্ঘ ১৪ মাস পর আবারও এই ওয়ার্ডের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে সকাল ১০টায় এ ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের আওতাধীন তিনটি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়। নগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের উপস্থিতিতে বাগমনিরাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল বশর এসব কমিটি গঠন করেন। দুইজনে মিলে সুন্দরভাবে ইউনিট সম্মেলন করলেও ওয়ার্ড সম্মেলনে এসে বিপত্তি বাঁধে। সাধারণ সম্পাদক আবুল বশরকে বাদ রেখে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান বাচ্চুকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিয়ে সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে।
বাগমনিরাম আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, বাগমনিরামের গ ইউনিট কমিটি গঠনের সময় গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউন্সিলর ছিল না। প্রতিটি ইউনিটে ১৫০জন করে কাউন্সিলর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সেখানে ছিল মাত্র ৫১জন। অথচ সেখানে ভোটার আছে প্রায় চার হাজার। খ নং ইউনিটেও কাউন্সিলর ছিল ১৩৪ জন। যেনতেনভাবে ইউনিট সম্মেলন শেষ হয়েছে। ওয়ার্ড সম্মেলনেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত হয়েছে। সভাপতি হিসেবে আব্দুল আজিম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাইফুল আলম বাবুকে রাখার বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একমত হয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা চাইলে বিরোধ মিটিয়ে সম্মেলন করতে পারতেন।
বাগমনিরাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, কারও অসহযোগিতার জন্য সম্মেলন বসে থাকতে পারে না। উনি (আবুল বশর) দুইদিনের সময় নিয়ে এখনো পর্যন্ত নেতৃবৃন্দের সাথে কোন যোগাযোগ করেননি। এরপরও আমরা বলেছি আপনি সম্মেলনে আসুন, প্রার্থী হোন। সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমেই কাউন্সিলররা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানাবে। নগর আওয়ামী লীগের নেতারা চাইলেও যাকে তাকে নেতা বানাতে পারবে না। কিন্তু উনি নেতাদের বলেছেন উনাকে সভাপতি করা হোক। মূলত সভাপতি হতে পারবে না, এমন শঙ্কা থেকেই ব্যক্তিগত অভিমত তুলছেন।
ভোট হলে সম্মেলনে যেতে অসুবিধা কোথায়, এমন প্রশ্নে বাগমনিরাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বশর পূর্বদেশকে বলেন, যে কাউন্সিলর তালিকা করা হয়েছে সেটি অবৈধ। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাউন্সিলর তালিকা অনুমোদন আমারও করার কথা ছিল। আমি এ তালিকা দেখি নাই। এখন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিয়ে কাউন্সিলর তালিকা করা হয়েছে। আমি বেঁচে থাকতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কেন আসবে?