ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা না বাড়লে প্রতিরোধ সম্ভব নয়

5

চট্টগ্রামে প্রতিদিনেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত তিনমাসে ডেঙ্গুতেমৃত্যু বরণ করেছে ৬৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যা অগণিত। ভাদ্র- আশ্বিনে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিশ মশার প্রজনন বেড়ে যায়। এতে ডেঙ্গু মশার আক্রমনে প্রচন্ড জ্বরসহ শরীরের নানা সমস্যার দেখা দেয়, যা আক্রান্তদের মৃত্যু ঝুঁকিতে নিয়ে যায়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আগস্ট-সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুর মৗসুম। এসময় থেমে থেমে বৃষ্টির সাথে তাপও বেড়ে যায়। এই রকম পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। আমরা লক্ষ্য করে আসছি এবার মৌসুমের আনেক আগে থেকে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। এখন পুরো মৌসুম, ফলে ডেঙ্গু মশার আক্রমণের ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বর। সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এতে মৃত্যুর সংখ্যাও। প্রথমবারের মতো দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপে আবির্ভূত হয় ২০১৯ সালে। ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, যা সাধারণত স্ত্রী মশা থেকে মানবদেহে বাহিত হয়। চার ধরনের ভাইরাস এই সংক্রমণের জন্য দায়ী। সম্প্রতি ঢাকঢোল পিটিয়ে মশক নিধন কর্মসূচি ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু চসিকের মশক নিধনেও থামছেনা ডেঙ্গুর প্রজনন ও আক্রমণ। বরং দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিস্থিতি এমন থাকলে সামনে আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। তাই চসিককে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। এর আগেও মেয়রসহ আরও কয়েকটি দপ্তরে আমরা বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ‘ডেঙ্গু চাখ রাঙাচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দওয়ায় ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়েছিলাম। কিন্তু এক কাপ পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়তে পারে। তাই টনে টনে ওষুধ ছিটালেও গণসচেতনতার বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ সাজেশন অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মশার ওষুধ কিনেছি। আগের ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তাই সন্দেহের কারণ নেই। সারা বছর মশক নিধন কার্যক্রম চলবে।
ওদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমানে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০-৪০ কাটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ এই রাগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। তাঁরা এটাও বলছে, ডেঙ্গু রাগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাড়িতে রেখে বেদনানাশক দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। প্যারােিসটামল জাতীয় ওষুধ দিয়ে রোগীর ব্যথা দূর করা হয়। অন্তত একবার আক্রান্ত ব্যক্তি পুনরায় আক্রান্ত হলে তাকে টিকা দেওয়া হয়। ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে থাকবেন নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার েেকানো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। এই সময় ডেঙ্গু জ্বর বড়ে যায়। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যমন পটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত¡া, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূলমন্ত্র এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এ মশা তুলনামূলক পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে বিস্তার করে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সব সময় মশারির ভতরে রাখুন। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দওয়ার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন, কল-কারখানাসহ যেসব জায়গায় পানি জমার সম্ভাবনা রয়েছে-সেসব জায়গায় নজরদারি করছি। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গুরোধে জনবল বাড়িয়ে নগরীতে ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি অসচেতন ভবন মালিককে শাস্তির আওতায় আনছেন। এ নিয়ে কীটতত্ত¡বিদ জানান, নগরে মশার ওষুধ ছিটানো হয় দিনের বেলায়। কিন্তু মশার ওষুধ ছিটানোর উপযুক্ত সময় সন্ধ্যা। অ্যাডাল্ট মশা মারার জন্য ফগিং করতে হবে সন্ধ্যায়। সেটা করতে হবে হটস্পটে। নগরীর আগ্রাবাদ, কদমতলী, বহদ্দারহাট, হালিশহর, সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা বেশি ডেঙ্গপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আমরা মনে করি, চসিক ও স্বাস্থ্য বিভাগ যাই করুক, বাস্তবতা হচ্ছে, জনগণকে সচেতন হতে হবে। বাড়ি, বাসা, দোকানপাট, অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজ- মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরের আঙ্গিনা ও আশোপাশের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখলে ডেঙ্গু থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। এক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।