কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
প্রথমবার জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ড করার সময় দেওয়া তথ্যের সাথে, নামের সাথে হাতে প্রাপ্ত কার্ডের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি অনেকের। নাম, জন্মতারিখ কিংবা ঠিকানা ভুল হয়নি এমন মানুষ বোধহয় নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার প্রয়োজন পড়েনি এমন ব্যক্তিও নেই। কাজকর্মে যখন এনআইডি প্রয়োজন হচ্ছে তখনি সেসব ভুল ধরা পড়ছে। আর এই ভুল করার দায় কি সাধারণ মানুষের? অথচ ভুলে ভরা সেই আইডি কার্ড সংশোধন করতে গিয়ে মানুষের শ্রম, অর্থ নষ্ট হয়েছে, হচ্ছে। হয়রানির কথা বাদই দিলাম। দরকার ছিল কোন ধরণের হয়রানি, অর্থব্যয় ছাড়া কর্তৃপক্ষের এই ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে দেওয়া। অনেককে দেখেছি, বিপুল অংকের অর্থ খরচ করে এই কার্ড সংশোধন করতে হয়েছে। এভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতার সনদসহ যাবতীয় সনদ সংশোধন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোন না কোনভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
কিছুদিন আগে ছাত্রছাত্রীদের ইউনিক আইডির জন্য জন্মনিবন্ধন সনদের অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে গিয়ে যা অবস্থা হয়েছিল তা ছিল রীতিমত ভয়ংকর! চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভিড় সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। আমি নিজেও প্রত্যক্ষদর্শী। অনুরূপভাবে দেশের সব ইউপি/সিটি কর্পোরেশন /পৌরসভায়ও একই অবস্থা হয়। তার উপর অতিরিক্ত টাকা আদায়, সময়মতো কপি না পাওয়ারও অভিযোগও ছিল বিভিন্ন এলাকায়। যদিও পরবর্তিতে সময় বাড়ানো হয়।
আইনে সাধারণ মানুষের সহজে হয়রানিমুক্তভাবে সেবা পাওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সবক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সেবা পাওয়াকে সহজ করতে হবে। সনদপত্রের বিষয়টি সেনসেটিভ। এর সাথে জড়িয়ে আছে ভর্তি, চাকুরিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়। সনদে ত্রæটির কারণে অনেককে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সেজন্য আবেদন করা থেকে শুরু করে সনদ সংশোধনের সব পর্যায়কে সহজ করা খুবই দরকার। সেবার ডিজিটাল কার্যক্রমকে গতিশীল ও ত্রæটিমুক্ত করা দরকার। অল্প সময়েই যেন সংশ্লিষ্ট সবাই সনদ সংশোধনের কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন সে ব্যবস্থা থাকা চাই। যার ভুলেই সনদে ত্রæটি থাকুক সেবাটি সবার জন্য সহজীকরণের দাবি জানাই।
শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে নাম কিংবা অন্যান্য সাধারণ ভুলের কারণে চাকুরি ও ভর্তির ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয় অনেককে। আগেকার সময়ে অভিভাবক ও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসেচতনতার কারণেও সনদে ভুল হয়েছে। যেটা সংশোধন করতে গিয়ে গলধঘর্ম হতে হয়েছে ভুক্তভোগীদের। এর আগে সকল প্রকার সনদ সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ঢাকা কিংবা কুমিল্লায় যেতে হয়েছে কয়েকবার। অর্থব্যয়তো হয়েছেই! এখন অবশ্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের ফলে ভোগান্তি কিছুটা কমলেও বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। অপেক্ষা ও ক্ষেত্রবিশেষে অর্থের বাগড়া রয়ে গেছে। পরিচয় কিংবা আর্থিক সুবিধাদি না দিলে কাজ থমকে থাকছে বেশকিছু ক্ষেত্রে। এসবের অবসান ঘটিয়ে সকল প্রকার সনদ সংশোধনের কাজকে সহজ করার কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি সনদ সংশোধনের জন্য চাওয়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সংখ্যা যেন বেশি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার। এমনসব তথ্য-উপাত্ত চাওয়া উচিত হবেনা যা কিনা দেওয়া আদৌ সম্ভব নয়। তাই যে কয়টা কাগজ/তথ্য না দিলেই নয় সে কয়টা কাগজ কিংবা প্রমাণাদিই নেওয়া সঠিক হবে বলে আমি মনে করি।
সনদ সংশোধনীসহ যে কোন ধরণের সেবা হতে হবে হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত এবং একেবারেই সহজ পন্থায়। হ্যাঁ, ব্যতিক্রম কিছু ক্ষেত্রে যা রাষ্ট্র ও প্রশাসনের জন্য হুমকির সৃষ্টি করতে পারে সেসবে অবশ্যই কঠোরতার প্রয়োজন রয়েছে। যেটি অবশ্যই ন্যূনতম সংখ্যা হবে।
সাধারণ মানুষ যেন সেবা পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে পারে সে ধরণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকল প্রকার সনদ সংশোধন প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানাই।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট