নিজস্ব প্রতিবেদক
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বন্দরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ কাজ করেন। এর মধ্যে পাঁচ হাজার মানুষ চট্টগ্রাম বন্দরের। অন্যরা বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির পক্ষে কাজ করেন। আমরা তাদেরকে আমাদের পরিবারের মনে করি। কারণ তারা চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করেন। ১৬ কোটির বেশি মানুষ দেশে, সবাই তো আওয়ামী লীগ করে না, নৌকায় ভোট দেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কখনো আপনারা শুনেছেন? তিনি নৌকা মার্কা বা আওয়ামী লীগের লোকজনকে দেখভাল করেন? তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে একটা মানসম্পন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এটাই হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ (সিবিএ) আয়োজিত শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে ‘চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে কর্মচারীদের অবদান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের লাইফলাইন চট্টগ্রাম বন্দর। কোনো সরকার তার লাইফলাইন বন্ধ করতে পারে না। এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ৯৫ ভাগ আমদানি রপ্তানি হয়। বন্দরের অবস্থা যেন আরও ভালো হয় সেই চেষ্টা করছি।
২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে একশ বন্দরের তালিকায় ছিল না উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিডের আগে আমরা ৫৮তম স্থানে চলে এসেছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দরের এক ইঞ্চি জায়গা খালি রাখছি না। দীর্ঘদিন কাস্টমস ইয়ার্ড পড়ে ছিল। সেখানে গাড়ির মধ্যে গাছ গজাতে দেখেছি। ঘরের মধ্যে গাছ দেখেছি। কেউ দেখেনি চট্টগ্রাম বন্দরের একটি জায়গা এভাবে পরিত্যক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক সমাধান করেছেন। এখন সেখানে এক লক্ষাধিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারব।
তিনি বলেন, আমরা এলসি করি ইক্যুইপমেন্টের চালানে আসে ইট পাথর বালু। এতে বর্হিবিশ্বে আমাদের বদনাম হয়ে যায়। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আমদানি রপ্তানিতে স্ক্যানার বসাতে হবে। আমরা স্ক্যানার বসিয়েছি। আরও দুইটি স্ক্যানার বসানোর চেষ্টা করছি। মেইন গেট ছয় লেনের হবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের পার্টনার হতে চায় অনেক বিদেশি বন্দর, অপারেটর, কোম্পানি। কাকে দেব কাকে দেব না সেই রকম অবস্থা হয়ে গেছে। মাতারবাড়ী টেন্ডার করেছি, আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানি আসতে চায়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ। আমরা দারিদ্র্যে জর্জরিত ছিলাম। আমাদের দেশের দারিদ্র্যতা বিক্রি করে ড. ইউনূস সুন্দর একটা নোবেল পুরস্কার নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমাদের দারিদ্র্যতা যায়নি। এ দারিদ্র্যতা বিক্রি করে আমাদের অতীতের অর্থমন্ত্রীরা বিদেশ থেকে মঞ্জুরি নিয়ে এসেছে, সাহায্য নিয়ে এসেছে কিন্তু আমাদের দারিদ্র্যতা যায়নি। দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এখন সবাই বাংলাদেশকে সমীহ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। মনে রাখতে হবে আগে বাংলাদেশের একমাত্র বন্দর ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। যেখানে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট ছিল। এখন মোংলায় ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট হয়ে গেছে। মার্চের ২৬ তারিখে পায়রা বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল তৈরি হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখেন, ভরসা রাখেন। আপনাদের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ ও চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এই চট্টগ্রামে কিছু হবে না। যা কিছু হবে চট্টগ্রাম ও দেশের মঙ্গলের জন্য হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, আমাদের সব যন্ত্রপাতি অটোমেটেড। আগে জাহাজ অপেক্ষা করত, এখন বন্দর অপেক্ষা করে জাহাজের জন্য। আমাদের বহরে ১৮টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। ৯০ ভাগ জাহাজ সরাসরি বন্দরে ঢুকতে পারছে। যেকোনো আন্তর্জাতিক বন্দরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম আমাদের বন্দর। নতুন কেমিক্যাল শেড তৈরি করছি। পিসিটির কাজ শেষ হয়েছে। বে টার্মিনালের একটি টার্মিনাল আমরা তৈরি করবো এবং চালাব। বাকি দুইটি বিদেশি অপারেটর পরিচালনা করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসবেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএর মোহাম্মদ আজীমের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনার করেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নায়েবুল ইসলাম ফটিক।
এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের বোর্ড সদস্য, বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।