একের পর এক অপহরণে রোহিঙ্গারা

12

টেকনাফ প্রতিনিধি

দিনের পর দিন অপহরণসহ নানা অপরাধে ব্যাপকহারে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। তাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় অপরাধের মাত্রার পাশাপাশি বাড়ছে নিরাপত্তায় ঝুঁকিও।
টেকনাফে গতকাল শুক্রবারও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পানের বরজে কাজ করতে গিয়ে এক কিশোরকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন এক পানচাষি।
সকাল ১০ টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের বড়ডেইল পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, অপহৃত কিশোর আবদুর রহমান আবছার (১৬) ওই এলাকার মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে। আর গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ শরীফ (৩০) ওই এলাকার সোনা আলীর ছেলে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানান, সকালে ওই এলাকার পাহাড়ের কিনারায় পানের বরজে কাজ করতে যান আবছার ও শরীফ। এসময় পাহাড় থেকে একদল অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা পানের বরজে হামলা করে আবছারকে ধরে ফেলে। এসময় শরীফ ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করে তারা। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে। বিষয়টি জানার সাথে সাথেই তিনি টেকনাফ থানা পুলিশকে অবহিত করেন বলেও জানান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থেকে দুই কৃষককে একদল রোহিঙ্গা বন্দুকধারী অপহরণ করে। একই সময়ে আরও তিনজনকে ‘গুলিতে ও কুপিয়ে’ আহত করেছে একই দলের লোকজন।
নিখোঁজ দুজন হলেন হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালীর প্রয়াত উলা মিয়ার ছেলে নজির আহমদ (৫০) ও তার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (২৭)।
আহত তিনজন হলেন একই এলাকার আবুল মঞ্জুরের ছেলে মো. শাহজাহান (৩৫), ঠান্ডা মিয়ার ছেলে আবু বক্কর (৪০) ও আবু বক্করের ছেলে মেহেদী হাসান (১২)।
গুলিবিদ্ধ শাহজাহানকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এবং আবু বক্কর ও তার ছেলে মেহেদীকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।একটি মোবাইল ফোন থেকে অপহৃতদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায় বলে স্বজনরা জানিয়েছিলেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আবুল মঞ্জুর জানান, ভোরে পাঁচজন খেতে কাজ করতে যান। সেখান থেকে তাদের ১০-১২ জন রোহিঙ্গা যুবক অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে কৃষকদের স্বজনরা দল বেঁধে ঘটনাস্থলের দিকে গেলে আহত তিনজনকে ‘গুলি করে ও কুপিয়ে’ ফেলে রেখে বাকি দুজনকে অস্ত্রের মুখে পাহাড়ের ভেতরের দিকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
এছাড়া গত ১ অক্টোবর মো. শফিক নামে আরও এক কৃষককে অপহরণ করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে অপহরণ করা হয়।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী জানান, পেয়ারা বাগানে কাজ করার সময় একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মরিচ্যাঘোনা এলাকার শফিককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত গত ৫ বছরে অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, পুলিশের ওপর হামলা, হত্যা ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধে মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৮ জন।
উখিয়ার পালংখালি ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ক্যাম্পগুলোতে এখন প্রধান চারটিসহ ৮-১০টি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে।
১৪ এপিবিএন-এর কমান্ডার সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, কিছু দিন আগে ক্যাম্পের পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছিল। তবে এখন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আছে। ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের ৬-৭টি সন্ত্রাসী গ্রæপ সক্রিয় আছে। তারা মূলত মাদক ও অপহরণ বাণিজ্যে জড়িত।