উপজেলা চেয়ারম্যানদের এমপি হওয়ার ‘খায়েশ’

51

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের আটজন উপজেলা চেয়ারম্যান এবার সংসদ সদস্য হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। গত দুইদিন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণকালে তারা প্রত্যেকেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ইতোমধ্যে দুইজন উপজেলা চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য পদে নৌকার মনোনয়নের আশায় পদত্যাগ করেছেন। উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শেষের কয়েকমাস আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় চেয়ারম্যানদের সাংসদ হওয়ার ‘খায়েশ’ হয়েছে।
গত দুইদিনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের আটজন উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এরা হলেন- পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী, সীতাকুÐ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব, বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. গালিব সাদলী, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম, কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল ও রামুর উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল। এদেরমধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় গত ৩০ অক্টোবর সীতাকুÐর উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ গতকাল রোববার পদত্যাগ করেছেন বাঁশখালীর চৌধুরী মো. গালিব। তিনি ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন।
বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. গালিব সাদলী পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার। তিনি বলেন, উনার পদত্যাগ পত্র পেয়েছি। এটি মন্ত্রণালয়ে গৃহীত হবে। গৃহীত হওয়ার পর নিয়মানুযায়ী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
উপজেলা পরিষদ আইনের ১২(১) ধারায় উল্লেখ আছে, সরকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযোগ্য পত্রযোগে চেয়ারম্যানরা স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারিবেন। পদত্যাগপত্র গৃহীত হইবার তারিখ হইতে পদত্যাগ কার্যকর হইবে এবং পদত্যাগকারীর পদশূন্য হইবে। একই আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, পরিষদের মেয়াদ শেষ হইবার তারিখের ১৮০ দিন বা তদপেক্ষা বেশি সময় পূর্বে চেয়ারম্যান পদশূন্য হইলে উক্ত পদটি শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিধি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করতে হইবে। এরমধ্যে কেউ নতুন করে নির্বাচিত হলে তিনি পরিষদের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য উক্ত পদে বহাল থাকবেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য পদত্যাগ করতে হবে।
কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন ফরম নেয়ার আগ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হবে না। এরপরেও যারা পদত্যাগ করছেন তারা আবেগের বশে করছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করতে হবে। এজন্য মনোনয়ন পাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতো উপজেলা চেয়ারম্যানরা।
চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেলে অবশ্যই পদত্যাগ করবো। না পেলে পদত্যাগ করবো না। এখন যারা পদত্যাগ করছে তারা আবেগে করছে।’
রামুর উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, ‘আমি নমিনেশন পেলে পদত্যাগ করবো। এর আগে পদত্যাগ করতে হবে না। যারা পদত্যাগ করছে তারা এমনিতেই করছে।’
সীতাকুন্ডের পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিশেষ কোনো কারণ কিংবা সুখবর আছে বলে আমি পদত্যাগ করি নাই। গতবার আমি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকায় মনোনয়ন পাইনি। তখন নেত্রী বলেছিলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যানকে মনোনয়ন দিব না। যে কারণে এবার আগেভাগে পদশূন্য হয়েছি। এবার নেত্রী নমিনেশন দিলে জয়ী হবো বলে আশা করছি।’