রাহুল দাশ নয়ন
চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের বাকি এক বছর। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে টার্গেট করেই দল ও মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে দাবি না মানলে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আন্দোলন ও নির্বাচন মিলিয়ে দুই বড় দলের জন্যই ২০২৩ সালটি গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে চলতি বছরটি হবে আন্দোলন ও নির্বাচনের বছর। এ বছরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা হবে। দুই দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা জানান, ২০২৩ সাল তাদের জন্য কঠিন এক বছর। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইবে আর বিএনপির চলমান আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা চাইবে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই বছরটি বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ। দুই দলই নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইবে নতুন বছরে। রাজপথে সংঘাত-রক্তপাত হতে পারে এমনটা ধরে নিয়েই দুদলই মাঠে থাকবে।
গেল বছরের অক্টোবর মাস থেকেই রাজনীতির উত্তাপের পারদ শুরু হয়। দুই বড় দলই পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ করে রাজনীতির মাঠ গরম রাখে। নতুন বছর ২০২৩ সালে উচ্চমাত্রায় পৌঁছবে উত্তাপের পারদ। দেশের মানুষের উদ্বেগও বাড়বে বছরটিতে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। নতুন বছরে আমাদের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে তৃণমূলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য দেখা দিয়েছে। সেগুলো সমাধান করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে এ বছরের গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ।’ আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, নির্বাচনকে টার্গেট করেই এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি আসনেই এবার শক্তিশালী প্রার্থী দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের বিজয়রথ অব্যাহত রাখতে চাইছে দলটি। শরিক দলগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক কৌশলও অবলম্বন করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি দল গুছিয়ে সংগঠনকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নিয়মিত কমিটি গঠন করে তৃণমূলে সংগঠনের গতি ফেরানো ও বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবেলার প্রস্তুতিও গ্রহণ করছে। চলতি বছরে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সকল শেণি-পেশার মানুষকে সংঘবদ্ধ করে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে নিজেদের গুরুত্ব তুলে ধরতে চায় আওয়ামী লীগ। একদিকে বিএনপির আন্দোলন ঠেকানো, অন্যদিকে নির্বাচনে দলের বিজয় দুটি নিয়েই ভাবছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি সূত্র জানায়, সরকার পতন আন্দোলনে সফলতার বিকল্প নেই বিএনপির। তাই দলটির নেতাকর্মীদের কাছে বছরটি বাঁচামরার বছর। এই বছর নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে মাঠে সক্রিয় অবস্থানে থাকতে চান দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি সরকারবিরোধী দলগুলোর সাথে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করে অবস্থান শক্তিশালী করতে চায় রাজনীতির মাঠে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে যেন নিজ দলের নেতাকর্মীরা পরাস্ত না হয় সেদিকটাই গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় সমাবেশ করার মধ্যদিয়ে তৃণমূলে সংযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। নতুন বছরে চলমান আন্দোলনে সফলতার উপরই আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে নাকি বিরত থাকবে তা নির্ভর করছে।
সারাদেশের ন্যায় উত্তপ্ত রাজনীতির পারদ চট্টগ্রামেও বহাল থাকবে। দেশের দ্বিতীয় রাজধানী ও অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রামের রাজনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে আওয়ামী লীগ। তাইতো, গেল বছরের শেষ সময়ে (৪ ডিসেম্বর) বড় জনসমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। যে জনসভায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনী পথেই আছে বলে জানিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, কয়েকটি উপজেলা ও থানায় সম্মেলন করে তৃণমূলকে চাঙ্গা করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম প্রতিহত করতে প্রস্তুত আছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠের দল। আওয়ামী লীগ আন্দোলন যেমন করতে জানে তেমনি আন্দোলন প্রতিহতও করতে জানে। দেশবিরোধী চক্রের হুমকি-ধমকিকে আওয়ামী লীগ কখনো পরোয়া করেনি। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। এই দলের প্রতি দেশের মানুষের বিশ্বাস আছে। আর জনগনের বিশ্বাসের মর্যাদা দেয়ায় হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাজ। অতীতেও তাই দিয়েছে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় ২০২৩ সাল আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, রাজনৈতিক দলের জন্য প্রতিটা সময় গুরুত্বপূর্ণ। তবে ২০২৩ সালে বিএনপি হারানো অধিকার, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। একই সাথে সকল কারাবন্দি নেতারা মুক্ত হবেন বলেই আমি মনে করছি।