আমিষের ঘাটতি

30

এম এ হোসাইন

খাবারের পুষ্টিগুণের উপর সুস্বাস্থ্য নির্ভরশীল। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে অনেক পরিবারকে হিমশিম খেয়ে চলতে হচ্ছে। প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উপাদান মাংস, দুধ, ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্য মিলছে না সুলভ মূল্যে। বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে এসব প্রাণিজ আমিষের উপাদানগুলো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখন রমজানে রোজাদাররা আমিষের ঘাটতিতে ভুগছেন বেশি।
আমিষের অন্যতম উপাদানগুলোর মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ঢাকায় বিক্রির উদ্যোগ (ভ্রাম্যমাণ) নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রমজানজুড়ে ঢাকায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামে আমিষের যোগানের সুলভ মূল্যের কোনো উদ্যোগই নেই। যদিও করোনাকালীন চট্টগ্রামে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ভ্রাম্যমাণ কার্যক্রম পরিচালিত করে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু রমজানের সময় এসব উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত দামেও কোনো উদ্যোগ নেই চট্টগ্রামে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা করোনার সময় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে দুধ, মাংস, ডিম এসব বিক্রি করেছিলাম। ভালো সাড়াও পেয়েছিলাম। রমজান উপলক্ষে ঢাকায় আমাদের একটি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে আমরা কোনো কার্যক্রম নিতে পারিনি। এজন্য ফ্রিজার ভ্যান দরকার, যেটি অনেক ব্যয়বহুল। আমাদের ঢাকায় একটি প্রকল্প আছে, সেখান থেকে ফান্ডিং হয়। চট্টগ্রামের জন্য কোনো ফান্ড নেই।
আমিষের উৎসগুলোর মধ্যে সহজলভ্য ও সস্তা হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির মাংস। অথচ সেই ব্রয়লার মুরগির দাম এখন প্রতি কেজি ২০০ টাকা ছুঁইছুঁই। মাস তিনেক আগেও যেখানে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। সাম্প্রতিক গরুর মাংস ও মুরগির দামে হতাশ হয়ে ক্রেতাদের মাছের বাজারে গিয়ে দামের আগুনে পুড়তে হচ্ছে।
কম দামের পাঙ্গাস থেকে শুরু করে সব ধরনের মাছের দামও বাড়তি। মাছ-মাংসের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের কিছুটা চাহিদা পূরণ করছিল ডিম। কয়েক মাস ধরে ওই ডিমের রেকর্ড দামে এসব মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ নাগালের বাইরে চলে গেছে।
আমিষের আরেক উৎস দুধ। তরল দুধের দাম গত ১ বছরে লিটারে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) এক লিটার দুধের দাম এখন ৯০ টাকা। টিসিবির হিসাবে গত ১ বছরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে ২৭ থেকে ৩৫ শতাংশ। দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের আমিষের চাহিদায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফলে জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মোট ছয় ধরনের খাবার রাখার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। দৈনিক গড়ে একজন মানুষের ২ হাজার ১০০ কিলোক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে আমিষ জাতীয় খাবার যেমন, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ১০-১২ শতাংশ থাকতে হয়। ভাত ও রুটি বা শর্করা জাতীয় খাবার থাকতে হবে ৬০-৭০ শতাংশ। আর বাকি ২০-২৫ শতাংশ তেলজাতীয় খাবার থেকে আসতে হয়। প্রতিদিন ভিটামিন ও খনিজ যেমন- শাকসবজি, ফলমূল খেতে হয়। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য দুধ খেতে হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, রমজানে প্রাণিজ আমিষের উপাদানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইফতারের পর পানির ঘাটতি মেটাতে শরবত, জুস এগুলো পান করতে হবে। তারপর সিদ্ধ ডিম খেতে পারে। খাবারের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলো থাকা দরকার। কোনো অবস্থাতেই ভাজাপোড়া খাওয়া উচিত নয়।
শুধু প্রাণিজ উৎস থেকে আমিষ পাওয়া যায় তা নয়, ডাল থেকেও আমিষ পাওয়া যায়। তবে প্রাণিজ আমিষই হচ্ছে প্রথম শ্রেণির আমিষ, যা পাওয়া যায় মাছ-মাংসে। মানুষের শরীরে আমিষের ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শিশুদের দীর্ঘমেয়াদে নানা রোগ দেখা দিতে পারে। পুষ্টিহীনতায় বর্ধন কমে যেতে পারে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্রয়লার মুরগির বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের পকেট কেটে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। রমজানের সময় সাধারণ মানুষ ন্যূনতম আমিষের ঘাটতি পূরণে মাছ-মাংস খেতে পারছেন না। শুধু বাজার সিন্ডিকেটের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনাকালীন মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণে দৈনিক ৪০ হাজার পিস ডিম ও ৪০ টন দুধ বিক্রি করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কৃষকদের মাধ্যমে ট্রাকে করে এসব বিক্রি করা হয়েছিল। এছাড়া গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি ও খাসির মাংসও বিক্রি করা হয়েছিল। মাংস, দুধ, ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্যের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তখন। তবে অল্প কয়েকদিন স্থায়ী ছিল ওই কার্যক্রম। তখন প্রতিলিটার দুধ ৬০ টাকা, প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, প্রতিটি ডিম ৬ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১১৬ টাকা এবং প্রতিকেজি খাসির মাংস ৭৫০/৭০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছিল।