ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, পদোন্নতি, পদসৃজন, স্কেল আপগ্রেডেশন তথা অধ্যাপক পদবীদের তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ন্যায্য দাবিগুলো আদায়ে কর্মবিরতি পালন করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। দাবি আদায় না হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত আলটিমেটাম অনুযায়ী সোমবার এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। কর্মসূচি থেকে দাবিসমূহ বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর টানা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন বক্তারা। গত সোমবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকে বাংলাদেশ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে দেশের সকল সরকারি কলেজ ও শিক্ষা বোর্ড সমূহে। কর্মবিরতি বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ঢাকার একটি কলেজের অধ্যাপক বলেন, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন থাকলেও সেগুলো সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী সমস্যার সমাধানে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তারা বলেছেন, আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার বার ধর্না দিয়েও ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কর্মবিরতিতে দাবি আদায়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে টানা তিনদিন কর্মবিরতি পালন করা হবে। আমরা মনে করি, শিক্ষা ক্যাডাররা যেসব দাবি নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামছে, তা একেবারে অযৌক্তিক নয়। তাদের এ দাবিগুলো নতুন নয়; অনেকদিন ধরে এসব দাবি নিয়ে তারা মন্ত্রণালয়ের সাথে কথাবার্তা বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দুজনই তাদের ন্যায্য দাবি পূরণে কথা দিয়েছিলেন। তাদের আশ্বাস থেকে বলা যায়, সরকার শিক্ষা ক্যাডারের দাবি পূরণে আন্তরিক। কিন্তু এরপরও কেন এড়িয়ে যাওয়া তা বোধগম্য নয়। আমাদের দেশে পেশার ক্ষেত্রে সরকাররি বা বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে এ সংকট প্রকট। প্রশাসনিক ক্যাডার আর শিক্ষা সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মেধা যাচাইয়ে অভিন্ন পদ্ধতির পরীক্ষা ও অন্যান্য স্তরগুলো সফলতার সাথে পেরিয়ে সরকারি কলেজে যোগদান করেন। কিন্তু আন্তঃক্যাডারের চরম বৈষম্যের স্বীকার হয়ে অনেককে চরম হতাশার মধ্যে চাকরি জীবন শেষ করতে হয়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক বিবেচনায় অনেকে জুনিয়র হয়েও নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি পেয়ে যান। কিন্তু অনেককে বছরের পর বছর একই পদে থেকে যেতে হয়। এছাড়া অধ্যাপক পদমর্যাদায় সচিব হলেও তাদের বেতন স্কেল চতুর্থ গ্রেডের উপর যায় না। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে শিক্ষা ক্যাডার থেকে পদায়নের অনুশসান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। যেমনটি মাদ্রাসা অধিদপ্তর, কিংবা প্রাইমারি বা কারিগরি। এমনকি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধিনে প্রায় ৮০টির মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু এখানের শিক্ষা বিভাগে শিক্ষা ক্যাডারের কেউ নেই। এসব কারণে শিক্ষকরা নানাভাবে হয়রানি শিকার হন। বঞ্চিত হন ন্যায্য প্রাপ্যতা ও সম্মান থেকেও। এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি। কর্মবিরতিতে যাওয়া শিক্ষকরা যা বলেন, যেমনটি- আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান, ক্যাডার কম্পোজিশন রুলসের সুরক্ষা, প্রাথমিক ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডার তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভুক্তদের প্রত্যাহার এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃজনসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের সকল ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন । আমরা মনে করি, এসব শিক্ষা ক্যাডারের দাবিগুলোর যৌক্তিক বিচারে গ্রহণযোগ্য হলে তা পূরণ করার দ্রæত উদ্যোগ নিতে হবে। কোন বিবেকবান মানুষ চাইবেনা, শিক্ষকরা দাবি নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রেখে আন্দোলন করুক। কিন্তু সমকালিন যুগ ও সময়ের প্রেক্ষিতে তাদের আত্মসম্মান সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়। বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরাও আরও বড় ধরনের বঞ্চনার স্বীকার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষকদের অবস্থান নির্ণয় করা এখনও সম্ভব হয়নি। তারা কী সিটি কর্পোরেশনের স্টাফ নাকি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের? এ প্রশ্নের উত্তর বের করা দায়। সীমাহীন বঞ্চনার মধ্যে শিক্ষকরা যখন থাকে তখন তারা কীভাবে সুন্দর পরিবেশে ভালো শিক্ষা দেবেন? সরকার স্মাট বাংলাদেশ নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে এর ভিত্তিতে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের বঞ্চিত করে সরকার লক্ষ্যে পৌঁছবে বলে ধারণা করলে তা ভুল হবে। আমরা বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। তার প্রতিটি কথা ও কাজ শিক্ষকদের অনুপ্রাণিত করে। তিনিই একমাত্র সরকার প্রধান যিনি শিক্ষককে লাল গালিচায় হাঁটিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়নে শিক্ষক সমাজ অপরিহার্য অংশ। সুতরাং সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি পূরণে সরকার আন্তরিক হবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।