রাহুল দাশ নয়ন
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন ১৮তলা ভবনের আট হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোরে হবে ‘ঐতিহ্য কর্নার’। যে কর্নারে ঠাঁই পাবে চট্টগ্রামের ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, নির্দশন, ধর্মীয় ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা, বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনৈতিক ও স্থাপত্যশৈলী। ভবনের ১৪ ও ১৫ তলার যে কোন একটি ফ্লোরে এ কর্নার করা হবে।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এক ফ্লোরেই সংরক্ষণেই এই উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঐতিহ্য কর্নার স্থাপনে ১০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেসব কমিটির সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করে জেলা পরিষদের ঐতিহ্য কর্নারকে সমৃদ্ধ করবে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শাব্বির ইকবাল পূর্বদেশকে বলেন, প্রস্তাবিত ঐতিহ্য কর্নারে চট্টগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতিসহ সকল নিদর্শন, বিখ্যাত ব্যক্তি ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী তুলে ধরা হবে। চট্টগ্রামের সকল গুনীজনদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি ও ৯টি উপ-কমিটি করা হয়েছে। তারা তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করে ঐতিহ্য কর্নারটি সমৃদ্ধ করবেন। প্রাথমিকভাবে ১৪ ও ১৫ তলার যে কোন একটি ফ্লোরে এটি হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমরা নতুন ভবনে উঠবো। এখন ভবনের ফিনিশিং কাজ চলছে। ভবনে উঠলেই ঐতিহ্য কর্নারের কাজ শুরু হবে। আপাতত ঐতিহ্য কর্নার হিসেবেই এটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটির সুন্দর একটি নামও দেয়া হবে। যা কমিটির সদস্যরাই প্রস্তাবনা দিবেন।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনকে ঐতিহ্য কর্নার স্থাপনে গঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। গত জুলাই মাসে এ কমিটির প্রথম সভা হয়। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় উত্থাপিত প্রস্তাবনা নিয়েই ঐতিহ্য কর্নার স্থাপনে বাকি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
গত ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রামের ঐতিহ্য কর্নার স্থাপনে গঠিত কমিটির প্রথম সভাতেও বেশকিছু প্রস্তাবনা উঠে আসে। সে সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও দুর্লভ ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য ঐতিহ্য কর্নারটি করা হবে। মোগল সা¤্রাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন, ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি উত্থাপন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের মতো যেসব ইতিহাস রয়েছে, তা ঐতিহ্য কর্নারে সংরক্ষণ করা হবে। চট্টগ্রাম হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের মানুষের কথা বলা, চলাফেরা, সংস্কৃতি আলাদা একটি ঐতিহ্য বহন করে। উন্নয়নের দিক থেকেও চট্টগ্রাম অনেকদূর এগিয়েছে। এসব কিছু বিবেচনা করেই চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছি। যে কারণে আট হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোরে ঐতিহ্য কর্নারটি করা হবে।
একই সভায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, ‘বিশ্বসভ্যতার সাথে চট্টগ্রামকে মিলিয়ে উপস্থাপন করার সুযোগ রয়েছে। বাইরে থেকে যারা চট্টগ্রামে আসবেন, তারা তাদের ইতিহাস এখানে এসে দেখবেন। একই সাথে চট্টগ্রামেরও যে হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে, তা জানতে পারবেন। একটি ভবনের আট হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোরে পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হলে, তা চমৎকার হবে। প্রতিটি উপজেলার ঐতিহ্যসমূহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে এ উদ্যোগ সার্থক হবে। উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও সময়োপযোগী।’
জানা যায়, জেলা পরিষদ টাওয়ারের সামনের আইল্যান্ড কোতোয়ালী থেকে লালদীঘি পর্যন্ত এবং পূর্ব দিকের দেওয়ালগুলো ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের অনাপত্তি নেয়া হয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে এসব জায়গায় চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে।
ঐতিহ্য কর্নারটি সম্পূর্ণ তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর হবে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য নিয়ে লিখা সকল বইসমূহ এই কর্নারে সংরক্ষণ করা হবে। চট্টগ্রামের গৌরবগাঁথায় বাদ পড়া ও নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের স্থান হবে এই কর্নারে। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কালুরঘাট ব্রিজ, কোর্ট বিল্ডিং, রেলওয়ে কার্যালয়ের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহের রেপ্লিকাও রাখা হবে। মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, রামগড়-ফটিকছড়ি সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত স্থলবন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ সাম্প্রতিক সরকারের অর্জনগুলোও এই কর্নারে স্থান পাবে। এছাড়া চট্টগ্রামের স্মরণীয় ও বরণীয় লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বিপ্লবী, বিজ্ঞানী, স্বাধীনতা সংগ্রামী, আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক, বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিল্পীসহ গুণী ব্যক্তিদের তালিকা ও অবদান বর্ণনাসহ সংরক্ষণ করা হবে। ঐতিহ্য কর্নারের একটি অংশে থাকবে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত ডকুমেন্টরি প্রদর্শনের মাল্টিমিডিয়া ডিসপ্লে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ডিসেম্বরে নতুন ভবনে উঠলেই ঐতিহ্য কর্নারের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ঐতিহ্য কর্নার করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাও হয়েছে। কমিটির দেয়া সব প্রস্তাবনা এক করেই ঐতিহ্য কর্নারটি করা হবে।