আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘খুশি রেখেই’ আসছে কমিটি

463

মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন আজ। দীর্ঘ ২০ বছর পর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। করোনার কারণে এবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভার্চুয়াল সম্মেলনে ঢাকার বাসা থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এবারের সম্মেলনে পদপ্রত্যাশী ৬০০ জন নেতা নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সেখান থেকে বাছাই করা নেতারাই পদে আসবেন।তবে নগর আওয়ামী লীগের বিরোধীয় সকল পক্ষকে খুশি রেখেই ‘সমন্বয়ের কমিটি’ গঠন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ইতোমধ্যে কমিটিতে আসতে নগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার সাথেও কথা বলেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ই.ফারুক আমজাদ খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসী খুশি হবে এমন কমিটিই দিব আমরা। আমাদের কাছে অনেকেই পদপ্রত্যাশা করে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এগুলো আমরা দেখছি। আপাতত কমিটিতে কারা আসছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভার্চুয়াল সম্মেলন। এই সম্মেলনের সফলতা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভার্চুয়াল সম্মেলনে নিজ নিজ বাসা থেকে বেশিরভাগ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন’।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০০১ সালে জুলাই মাসে সর্বশেষ নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে এএইচএম জিয়াউদ্দিনকে আহবায়ক ও কেভিএম শাহাজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও আমিনুল ইসলামকে যুগ্ম আহবায়ক করে ২১ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। তিন মাস মেয়াদী এ কমিটি দীর্ঘ ২০ বছর পর সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটি গঠনের জন্য ১৪টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক এএইচএম জিয়াউদ্দিনকে আহবায়ক, কেভিএম শাহজাহানকে যুগ্ম আহবায়ক ও সালাহউদ্দিন আহমদকে সদস্য সচিব করে ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা যায়, সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ উদ্বোধক এবং প্রধান বক্তা থাকবেন সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু।
বিশেষ অতিথি থাকবেন ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ওয়াশিকা আয়েশা খান এমপি, আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক এ্যাড. এএইচএম জিয়াউদ্দিন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন।
ইতোমধ্যে সম্মেলন সফল করতে সাজানো হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ। পুরো হলের চারপাশে পোস্টার-ব্যানারে ছেঁয়ে গেছে। নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও পদপ্রত্যাশীদের ব্যানার-পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। এরমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ই. ফারুক আমজাদ খান, ড. জমির উদ্দিন সিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম আজিম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফাসহ কেন্দ্রীয় একঝাঁক নেতা চট্টগ্রামের সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভার্চুয়াল সংযোগে যুক্ত হবেন।
পদপ্রত্যাশী নেতারা গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়াও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুকম্পা নিয়ে নেতা হতে চান পদপ্রত্যাশী অধিকাংশ নেতা। এই দুই নেতার বলয়ের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার পছন্দের প্রার্থীরাও পদে আসতে মরিয়া।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলয় থেকে পদ পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন দেবাশীষ নাথ দেবু, আজিজুর রহমান, আবুল হাসনাত বেলাল, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা নেতাদের মধ্যে সুজিত দাশ, হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, আব্দুর রশিদ লোকমান, আবদুল্লাহ আল মামুন পদ পাওয়ার দৌঁড়ে আছেন। এছাড়াও সিটি কলেজ ছাত্রলীগ ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. সাইফুদ্দিন সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিনের পক্ষে কমিটিতে আসতে বেশ তৎপর।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রত্যাশী নেতা দেবাশীষ নাথ দেবু পূর্বদেশকে বলেন, ‘গত দুই দশক ধরে যারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল তাদেরকেই নগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হোক। বাকিদের অন্যান্য পদগুলোতে রাখা হোক। তবেই সুন্দর ও সুশৃঙ্খল কমিটি হবে’।
আরেক পদপ্রত্যাশী নেতা আবদুর রশিদ লোকমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদেরকে কমিটিতে রাখলে সবার জন্য ভালো হবে। এছাড়াও বিভিন্ন নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছে তারাই যাতে কমিটিতে আসে সে প্রত্যাশা করছি’।
সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. সাইফুদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে চার বার কারাবরণ করেছি। আমার বাসভবনেও হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। দুঃসময়ে রাজনীতি করে সুসময়ে এসে পদপ্রত্যাশা করছি। আশা করছি নেতারা আমাকে মূল্যায়ণ করবেন’।