মনিরুল ইসলাম মুন্না
নানা কারণে চাকরি হারানো বেকাররা মোটরসাইকেল ফ্রিল্যান্সিং বা রাইড শেয়ারিং করলেও তারা কেউ অ্যাপস ব্যবহার করছেন না। অ্যাপে না গিয়ে তারা যাত্রীদের খ্যাপে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেক সময় যাত্রীরা অ্যাপে রিকুয়েস্ট দিলেও রাইডাররা নিজেদের মত চুক্তি করতে তা বাতিল করতে বলেন। এতে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতিমালা না মানা, সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরিসহ নানা কারণে পুলিশের তোপের মুখে পড়তে হয় রাইডারদের।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘যারা রাইড শেয়ারিং করে তাদের প্রতি পুলিশ মানবিক আচরণ করে। তবে কেউ যদি সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে যানজট তৈরি করে তাকে মামলা দিয়ে থাকি।’
জানা যায়, ২০১৬ সালে পাঠাওয়ের মাধ্যমে দেশে প্রথম রাইড শেয়ারিং চালু হয়। পরে স্যাম, ওভাই, সহজসহ আরও অনেক কোম্পানি রাইড শেয়ারিং সুবিধা নিয়ে আসে। কিন্তু চালকদের আয়ের একটা অংশ কোম্পানিগুলোকে দিতে হয় বলে অনেকে অ্যাপস ভিত্তিক শেয়ারিংয়ে অনীহা প্রকাশ করেন। গত বুধবার নগরীর নিউ মার্কেট, বাকলিয়া শাহ আমানত সেতু চত্বর, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসি, আগ্রাবাদ মোড়ে রাইড শেয়ারিং করা চালকদের সাথে কথা বলে নানা তথ্য জানা যায়।
সরেজমিন নিউ মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিপণি বিতানের সামনে ট্রাফিক বক্সের উল্টো দিকে রাস্তার একপাশে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ছয়জন মোটরসাইকেল শেয়ারিং রাইডার। মোটরসাইকেলের উপর বসে মাথায় হেলমেট পরে যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু এ ছয়জন রাইডারের কেউ অ্যাপস ব্যবহার করছেন না। তারা মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যান। এমনটি করে আসছেন দীর্ঘ দুই বছর ধরে।
অ্যাপস ভিত্তিক শেয়ারিং কেন করেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাইডার জুনায়েদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘পাঠাও বা উবারে যদি যাত্রী শেয়ারিং করি তাহলে ভাড়ার ১৮ শতাংশ ওই কোম্পানিকে প্রদান করতে হয়। যদি দিনে ৮০০ টাকার শেয়ারিং হয় তাহলে প্রায় ১৫০ টাকা ওই কোম্পানির কাছে চলে যায়। আর যাত্রীর সাথে আমি যদি চুক্তি করতে পারি, তাহলে এই দেড়শো টাকা দিয়ে অন্তত দুপুরের খাবারটা সারতে পারি।’ কথা হয় রাইডার মো. করিমের সাথে। তিনি একসময় বেসরকারি একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন দিলে সে বছরের অক্টোবর মাসে তার চাকরি চলে যায়। ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বেকার জীবনযাপন করেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও কোনো চাকরি পাননি তিনি। অভিজ্ঞতা থাকা স্বত্তে¡ও বেকারই থেকে যান। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে বাধ্য হয়ে নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়।
তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘এছাড়া কোনো উপায় ছিল না আমার। কোনো কোম্পানিতে চাকরি হচ্ছিল না। সবাই অফিসকর্মী ছাটাই করছেন। নিজে উপোস থাকলেও স্ত্রী-সন্তানদের তো উপোস রাখতে পারি না। বাধ্য হয়ে এ পেশায় চলে এসেছি।’
জিইসি মোড়ে রাইডার কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বিপদ মাথায় নিয়ে এখানে (মোড়ে) অবস্থান করছি। রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। পুলিশ যখন-তখন এসে মামলা দিয়ে চলে যায়। গত মাসে আমাকে মামলা দিয়েছে।’
বহদ্দারহাট এলাকায় মো. রবিউল নামের এক রাইডার বলেন, ‘রাস্তার পাশে যাত্রীর জন্য অবস্থানকালে ট্রাফিক পুলিশের অনেক সদস্য আমাদের সহযোগিতা করেন। আবার অনেক সার্জেন্ট রাস্তা ফাঁকা রাখার পরামর্শ দেন। আবার অনেকে কোনো কিছু না বলেই মামলা দেন। এ নিয়ে কিছুটা আতঙ্কে থাকি। তারপরও নিরূপায় হয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘রাইডাররা পার্কিং কোথায় করবে বা না করবে সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। তাই যেখানে ইচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক সময় যান চলাচলে অসুবিধা হয়। তখন আমাদের সার্জেন্টরা একজনকে মামলা দিয়ে বাকিদের শুধরে নেয়ার সুযোগ করে দেন। আমরা বাইক রাইডারদের জন্য পার্কিং নির্ধারণ করার বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করেছি। তাছাড়া কোনো রাইডার যদি অহেতুক হয়রানি বা মামলার শিকার হন তবে সংশ্লিষ্ট উপ-পুলিশ কমিশনারকে (ডিসিকে) জানালে তিনি সমাধান করে দিবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সড়কে যান চলাচল সচল রাখার জন্য যতটুকু আইন প্রয়োগ করা দরকার আমরা ততটুকুই করছি। এর বাইরে কিছু করছি না। নগরবাসী, গাড়িচালক ও যাত্রীরা সহযোগিতা করলে আমরা সুন্দর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে পারবো।’