অর্থনৈতিক বিবেচনায় রামগড় স্থলবন্দর অধিক ইতিবাচক

18

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেছেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে রামগড় স্থলবন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। যেকারণে দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় রামগড় স্থলবন্দর বেনাপোলের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রামগড় স্থলবন্দর চালুর পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে চট্টগ্রামের সর্বসাধারণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পেয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার চট্টগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যা ভবিষ্যতে চট্টগ্রামকে আরও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে। চট্টগ্রাম থেকে বেনাপোল যেতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি রপ্তানি হয় তা আরও কম সময়ে ও খরচে করা সম্ভব হবে। যা অর্থনৈতিক বিবেচনায় সারা দেশের জন্য ইতিবাচক। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রাম বন্দর ও মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দরের মত সুফল কাজে লাগাতে রামগড় অধিক ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, রামগড় স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে মিরসরাই-ফটিকছড়ি সহ উত্তর চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে ফেনী নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১। যা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে রামগড়কে সংযুক্ত করেছে। তাছাড়া এ বন্দর চালু হলে রামগড় থেকে ভারতের ওপর দিয়ে সিলেটের মাধবপুর পর্যন্ত নরসিংদী-মৌলভীবাজার সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করা গেলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও সিলেটে যাতায়াতের সুবিধা পাবে চট্টগ্রামবাসী।
এদিকে, আজ (২৪ মে) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে যাচ্ছে ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বারৈয়ারহাট-হেয়াঁকো রামগড় সড়কের প্রশস্তকরণ ও আধুনিকীকরণ কাজের। যা রামগড় স্থলবন্দরের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করবে। এ প্রকল্পে থাকবে ২৪৯.২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৯টি ব্রিজ ও ১০৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে ২৩টি সেতু। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান স্টেট ক্রেডিটের আওতায় অর্থাৎ ভারত সরকার ঋণ হিসাবে দিচ্ছে ৫৯৪.০৭ কোটি টাকা। এ সড়ক নির্মিত হলে খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি থেকে বিভিন্ন পণ্য রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাতে আরও সময় কম লাগবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র ৩ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য যেতে পারবে ভারতে। দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের তথা সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, আমার স্বপ্ন দেখা বহু ঘাম ঝরানো দীর্ঘ প্রচেষ্টার সুফল রামগড় স্থলবন্দর শীঘ্রই চালু হবে ইনশাআল্লাহ। স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৯১-৯২ সালে ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে বুঝতে পেরেছিলাম ভারতের সাথে স্থলবাণিজ্য সুবিধার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ভারতের সাথে সীমান্ত থাকা স্বত্তে¡ও এখানে কোন স্থলবন্দর নেই। ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে সরাসরি আবেদন করি ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম জেলার সাথে বাংলাদেশের রামগড়-ফটিকছড়ি উপজেলার সীমান্তে স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার জন্য। আবেদনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগ মন্ত্রীকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি সড়ক ও রেলপথে ৯০ কি.মি. দূরত্বে দেড় ঘন্টা সময়ে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলার উপর দিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হতে ভারতের সাব্রুম জেলার সীমান্তে পৌঁছানো সম্ভব।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যে উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ দেন। স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি উপজেলায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গহিরা-বিবিরহাট সড়ক, পেলাগাজী-হেয়াঁকো সড়ক, মাইজভাÐার-নাজিরহাট ও হাটহাজারী- ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি সড়ক উন্নয়ন।
পেয়ারুল ইসলাম বলেন, স্থলবন্দর হতে কার্যকর সুবিধা পেতে হলে জরুরি ভিত্তিতে মিরসরাই সদর-নারায়নহাট সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, নাজিরহাট-সুয়াবিল-হারুয়ালছড়ি-কাজীরহাট এলজিইডি সড়ক সওজের আওতায় এনে ৪ লেনে উন্নীতকরণ, নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজ ভেঙ্গে নতুনভাবে করা, নাজিরহাট রেললাইন ৩৫ কি.মি. বর্ধিত করে রামগড় পর্যন্ত এবং রামগড় স্থলবন্দর হতে ভারতের ত্রিপুরার উপর দিয়ে সিলেটের মাধবপুর পর্যন্ত নরসিংদী মৌলভীবাজার সড়কের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। যাতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও সিলেট বেল্টে যাতায়াতের সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া হাটহাজারী বাজারের উপর ফ্লাইওভার নির্মাণ অথবা বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. হারুনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল আলম, ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ ফিরোজ, সাদাত আনোয়ার সাদী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাংবাদিক এস এম ইফতেখারুল ইসলাম, এস এম কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য বোরহান উদ্দিন মো. এমরান, দিলোয়ারা ইউসুফ, এইচ এম আলী আবরাহা দুলাল, ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদ, লেলাং ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহীন, আব্দুল্লাহপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওহিদুল আলম, বক্তপুর চেয়ারম্যান ফারুক-ই-আজম, নানুপুর চেয়ারম্যান মো. শফিউল আজম, রোসাংগিরি চেয়ারম্যান শোয়াইব আল-সালেহিন, তামাকুমন্ডি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির দুলাল, মো. জায়নুল আবেদীন, শহিদুল ইসলাম পিন্টু, হাবিব সাজ্জাদ, মাসুদ পারভেজ, রাইসুল ইসলাম চৌধুরী এমিল, ইমরান মুহুরী, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, গোলাম সরোয়ার সুরুজ, জাবেদ জাহাঙ্গীর টুটুল, মুহাম্মদ রিয়াজুর রহমান চৌধুরী, রাসেদুল করিম রাসু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।