অবৈধ কার-মাইক্রো স্ট্যান্ডে বাড়ছে যানজট-দুর্ভোগ

25

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ কার-মাইক্রো স্ট্যান্ড। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডে পার্কিংয়ের কারণে নিত্য যানজট লেগে থাকে। এতে যানজটসহ নানামুখী দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী।
জানা গেছে, অলংকার একে খানের মধ্যবর্তী স্থানে, হালিশহর বড়পোল রামপুর বিদ্যুৎ অফিসের সামনে, জিইসি স্যানমারের সামনে ও বিপরীতে র‌্যাম্পের নিচে, কাতালগঞ্জ পার্কভিউ হাসপাতালের সামনে, লালদীঘি মসজিদের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে এবং শাহ আমানত সেতু এলাকায় রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবৈধ মাইক্রো স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব স্ট্যান্ডগুলোর মধ্যে কিছু রয়েছে রেন্ট-এ কার, বাকিগুলো রিজার্ভ এবং যাত্রী পরিবহন সার্ভিস। এসব গাড়ি রাস্তায় রাখার কারণে পথচারীরাও চলাচল করতে পারেন না। রাস্তা ও ফুটপাত দখল করেই চলে এই পার্কিং বাণিজ্য। প্রতিটি গাড়িকে ওই এলাকার কার-মাইক্রো সমিতির অন্তর্ভুক্ত হতে হয়। এতে ফি দিতে হয় ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং প্রতিমাসে লাইন খরচের জন্য দিতে হয় এক হাজার টাকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, অলংকার পুলিশ বক্সের উত্তর পাশে একে খান মোড়ের আগে কুমিরা-সীতাকুন্ডগামী একটি কার স্ট্যান্ড রয়েছে। যেখানে ১৫০ থেকে ১৮০টি কার নিবন্ধিত। পুরো লাইন নিয়ন্ত্রণ করেন মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘এখানে কিছু গাড়ি এক হাজার টাকা এবং কিছু ৫০০ টাকা দেয়। লাইন চালাতে গেলে এখানে স্থানীয় থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করা লাগে। বিশেষ করে অলংকার ও একে খানে নেতৃত্ব পর্যায়ে সবাইকে ম্যানেজ করতে হয়। ট্রাফিক ও থানায় গাড়ি লাগলে আমরা দিই। আবার অনেক সাংবাদিকের আত্মীয়ের গাড়িও আছে। সবদিকে সিস্টেম করে চালাতে হয়।’
পাহাড়তলী এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) অমলেন্দু বিকাশ চন্দ বলেন, ‘তারা নিজেরা পিট বাঁচানোর জন্য আমাকে দোষারোপ করছে। আমি অলংকার এলাকায় শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
হালিশহর থানাধীন রামপুর পিডিবি অফিসের সামনে শতাধিক গাড়ি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আরও একটি স্ট্যান্ড। যেটি নিয়ন্ত্রণ করেন মোহাম্মদ আলী। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি যে টাকা নিই, সেটা আমাকে প্রমাণ দেন। গাড়ি সবগুলো নিজেদের। আমরা সবাই চট্টগ্রাম হালকা মোটরযান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত।’
পাঁচলাইশ থানাধীন কাতালগঞ্জ পার্কভিউ হাসপাতালের সামনে শ্রম আদালত, বিমান বাহিনী, গণপূর্ত এবং সিটি করপোরেশনের জায়গার উপর রয়েছে শতাধিক কার-মাইক্রো। এটা নিয়ন্ত্রণ করেন চট্টগ্রাম মাইক্রোবাস চালক কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম শাহিন চট্টগ্রাম হালকা মোটরযান চালক শ্রমিক ইউনিয়নেরও সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাইফুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘স্ট্যান্ডটি নিয়ে আমরা হাইকোর্টে রিট করেছি। আর স্ট্যান্ডটি সড়কের উপরে নয়, সড়কের পাশে। তাই কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাছাড়া ট্রাফিক বিভাগ থেকে আমরা স্ট্যান্ড করার অনুমতি পেয়েছি।’
এ বিষয়ে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের টিআই (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে লর্ডস ইন হোটেলের সামনে ও বিপরীতে রয়েছে আরও একটি অবৈধ কার স্ট্যান্ড। যেটার নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন চট্টগ্রাম হালকা মোটরযান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের টিআই (প্রশাসন) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। অবৈধ গাড়ি পেলে মামলা ও জব্দ করা হচ্ছে।’
খুলশী থানার ওসি রুবেল হাওলাদার বলেন, ‘রাস্তার উপরে কার পার্কিং করে রাখতে পারে, তবে কোন স্ট্যান্ড এখানে নেই।’
লালদীঘি মসজিদের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে দীর্ঘদিনের একটা অবৈধ কার ও মাইক্রো স্ট্যান্ড রয়েছে যেটার জন্য আলাদা একটা সমিতিও রয়েছে। সেটার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ টিপু বলেন, ‘আমাদের পার্কিং অবৈধ সেটা ঠিক। তবে আমরা থানা ও ট্রাফিক অফিসারদের প্রয়োজনে গাড়ি প্রদান করি।’ তবে বিষয়টি নিয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি এম ওবায়দুল হক বলেন, ‘আমি আসার পরে এখনও কোনো গাড়ির প্রয়োজন পড়েনি। তাই তাদের থেকে কোনো গাড়ি নেয়া হয়নি। এরপরও আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি, অবৈধ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শাহ আমানত সেতুর বশরুজ্জামান চত্বরে রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত একটা অবৈধ মাইক্রো স্ট্যান্ড রয়েছে। রাতের বেলায় দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়ায় এসব মাইক্রো যাতায়াত করা হয়। এসব মাইক্রো নিয়ন্ত্রণ করেন মো. রাসেল। এ ব্যাপারে রাসেলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে বাকলিয়ার টিআই অপূর্ব কুমার পাল বলেন, ‘ রাত ১০টার পর ট্রাফিকের কেউ নতুনব্রিজ এলাকায় থাকে না। মাইক্রোগুলো রাতের বেলা গ্যাস নেয়ার জন্য নগরীতে আসে। গ্যাস নিয়ে যাওয়ার সময় তারা যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। তাদেরকে আমি চিনি না।’
বাকলিয়ার ওসি আফতাব হোসেন বলেন, ‘আমি কথাটি আজকে প্রথম শুনলাম। বিষয়টা সত্য হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চট্টগ্রাম হালকা মোটরযান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের গাড়িগুলো পার্কিংয়ের জন্য অনেকবার আবেদন করেছি। এখানের অনেক স্ট্যান্ড ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরনো। নির্দিষ্ট পার্কিং পেলে আমরা চলে যাবো। ততদিন আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে ম্যানেজ করা ছাড়া উপায় নাই। তা নাহলে পদে পদে আমাদের হয়রানির শিকার হতে হবে।’
সিএমপি ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তারেক আহম্মেদ বলেন, ‘অবৈধ কার-মাইক্রো স্ট্যান্ড উচ্ছেদের বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি। এসব স্ট্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে আছে, আমাদের কর্মকর্তারা মামলা ও আটক করছেন। এরপরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা অভিযান দিবো।’