আসহাব আরমান
২ বছর ধরে ঘাড় ব্যাথায় ভুগছিলেন সাতকানিয়ার বাসিন্দা আবুল হাশেম। উপজেলায় বিভিন্ন ডাক্তার দেখানোর পরও ব্যথা সারেনি। দিন দিন আরও বেড়েছে। অবশেষে এক প্রতিবেশির পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি হন। নানা চিকিৎসা শেষে ডাক্তাররা অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। এবার অপারেশনের সিরিয়ালের অপেক্ষা। অবশেষে দেড় মাস পর মিলে কাক্ষিত সিরিয়াল।
গত ১১ নভেম্বর ওয়ার্ডটির বিভাগীয় প্রধান ডা. রবিউল করিমের নেতৃত্ব হাশেমের অপারেশন হয়। বর্তমানে ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। আবুল হাশেমের মত শতাধিক রোগী বর্তমানে ওয়ার্ডটিতে অপারেশনের সিরিয়াল পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেকে প্রায় দুই মাস ধরে অপেক্ষা করছেন সিরিয়াল পাওয়ার জন্য। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল সংকটের কারণে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবুল হাশেমের ছেলে মো. লোকমান জানান, বাবার মেরুদন্ড সার্জারি হয়েছে। ভর্তির পর বিভিন্ন মেডিকেল চেকআপ শেষ করে ডাক্তাররা অপারেশনের করাতে বলেন। অপারেশনের সিরিয়াল পেতে দেরি হওয়ায় এতদিন অপেক্ষা করেছি। এ ওয়ার্ডে প্রায় অপারেশনের রোগী হওয়ায় সিরিয়াল পেতে সময় লেগেছে। বর্তমানে আমার বাবা আগের চেয়ে অনেক সুস্থ। একই কথা বলেন সদ্য অপারেশন হওয়া সাইদুল ইসলামের স্বজন রোজিনা বেগম। তিনি বলেন, রোগী বেশি হওয়ার সিরিয়াল পেতে দেরি হয়। আমরাও প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় অপেক্ষা করে অবশেষে সিরিয়াল পেয়েছি।
চমেকের নিউরো সার্জারি ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, ৪৫ শয্যার বিপরীতে ১৪০ জনের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। যা এই বিভাগের শয্যার তুলনায় প্রায় তিন গুণের বেশি। শয্যা সংকটের কারণে হাসপাতালের মেজেতেও রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। অতিরিক্ত রোগী থাকলেও এই ওয়ার্ডের জন্য মাত্র একটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। অনেক সময় আইসিইউ খালি পাওয়া যায় না। এসব কারণে রোগীদের অপারেশনে সিরিয়াল পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া ওয়ার্ডটিতে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের সরবরাহ কম। নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে বর্তমানে ২১ জন ডাক্তারের বিপরীতে সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক মিলে মোট ১৩ জন ডাক্তার রয়েছে।। ৩০ জন স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রয়েছে।
নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. রবিউল করিম পূর্বদদেশকে বলেন, বর্তমানে নির্ধারিত শয্যার কয়েকগুণ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু সরকারি হাসপাতাল, তাই কাউকে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ। তাই জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কম থাকলে অতিরিক্ত রোগী সেবা দিতে হচ্ছে। আমাদের কাছে অনেক তাদের অপারেশনের সিরিয়াল এগিয়ে আনার অনুরোধ করেন। কিন্তু কাকে বাদ দিয়ে কাকে দিব। সবার তো অপারেশন জরুরি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান পূর্বদেশকে বলেন, নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে বর্তমানে মাত্র একটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। ফলে অপারেশনের অনেক রোগী থাকলেও দ্রুত অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ সমস্যা অচিরেই কেটে যাবে। নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে দুইটি অপারেশন থিয়েটার স্থাপনের কাজ শীগ্রই শুরু হবে। একইসাথে অপারেশনের রোগীদের জন্য ১০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপন করা হবে। সব কাজ সম্পন্ন হলে এই ওয়ার্ডের রোগীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।