বিদায় ২০১৯, সুস্বাগতম ২০২০

95

আজকের সন্ধ্যাকাশে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথেই বর্ষপঞ্জি থেকে অনন্তকালের সাথে হারিয়ে যাবে আরো একটি বছর ‘২০১৯’ এবং কাল থেকে যুক্ত হবে আরও একটি নতুন বছর ‘২০২০’। অশ্রæনান্দে বিদায় দিলাম ২০১৯ কে। আর সুস্বাগতম ২০২০ সাল। বিগত বছরের সব চাওয়া এবং পাওয়াকে পেছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়াই হবে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। বিগত বছরে অনেক না-পাওয়ার মাঝে বেশ কিছু পাওয়া ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ্মার সেতু নির্মাণে সরকারের শতভাগ সফলতা।
বর্তমানে পদ্মাসেতুর কাজ প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ শেষ হয়েছে। আশা করা যায় সরকারের এ মেয়াদে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হবে এবং বাংলাদেশের উত্তর জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখের অবসান ঘটবে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এমন একটা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে পেরেছে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তাদের ক্ষমতা ও সম্পদ শ্রদ্ধার চোখে দেখার মতো। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচিত ছিলেন। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, সৎ, সাহসি ও প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পৃথিবীর বড় বড় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের পেছনে ফেলা, রোহিঙ্গা বিষয়ে জনমত সৃষ্টি করা, দেশের অভ্যন্তরে মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা ইত্যাদি ছিল নিত্যদিনের আলোচিত খবর। বিগত বছরটিতে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল বলতে গেলে সরকারের শতভাগ অনুকূলে। বিরোধী দলের রাজপথে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিলনা বলেই চলে। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অতি প্রাচিন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এখন বেশ বেকায়দায় রয়েছে, তাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে জেলে রয়েছে। দলের অন্যতম নেতা তারেক জিয়া বিভিন্ন মামলার দÐ মাথায় নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছে। দেশে অবস্থানকারী দলটির নেতাদের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে রাজপথে দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলামকে বক্তব্য বিবৃতি দিতে দেখা গেলেও তা নিয়ে তাদের দলেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেক সময় দলটির মহাসচিব ফখরুল নাকি রিজভী তা অনেকেই বুঝতে পারেনি কারণ রিজভীকে মাঝে মাঝে স্বল্পসংখ্যক মানুষকে নিয়ে ঝটিকা মিছিল করতে দেখা গেছে। বিগত বছরে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া দেখা গেলেও মায়ানমার ছিল সবসময় নিরব। বছরের শেষের দিকে আফ্রিকার ছোট দেশ গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতে করা মামলায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী সূচিকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। এতে করে বাংলাদেশ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে। এতোদিন মায়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুটি তেমন পাত্তা না দিলেও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর তৎপরতার ফলে তাদের বোধের উদয় হতে শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে ২০১৯ সালটি ছিল বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাল কারণ এই সাল থেকেই তিনি দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তাছাড়া তার দলের মধ্যে ঢুকে পড়া বর্ণচোরাদেরও তিনি চিহ্নিত করে দল থেকে বহিষ্কার করবেন বলে ঘোষণা দেন। ইতিমধ্যে তিনি দলের মধ্যে ঢুকে পড়া বর্ণচোরাদের মাঠ পর্যায়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছেন। আশা করা যায় নতুন বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে পেয়াঁজের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি জনগণকে বেশ ভুগিয়েছে। প্রতিবেশি দেশ ভারত তাদের পেঁয়াজ স্বল্পতার কারনে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে ৩০/৩৫ টাকা দামের পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে পেয়াঁজ আমদানি করলেও শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজের মূল্যের রাশ টানা যায়নি। বর্তমানে পেয়াঁজের বাজার মূল্য কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে বছরের একেবারে শেষ দিকে এসে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র এবং মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের একটি তালিকা প্রকাশ করলেও সে তালিকা ছিল ভুলেভরা। অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উক্ত তালিকায় এসে পড়ায় ব্যাপক প্রতিবাদ এবং প্রতিক্রিয়ার মুখে তা সরকার প্রত্যাহার করে নেয়। উক্ত তালিকায় দেশের অনেক স্বীকৃত রাজাকারদের নাম না দেখে স্বাধীনতার স্বপক্ষের বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের কাছে কৌতুহলের জন্ম দেয়, এ তালিকা বানালো কারা ? সর্ষের মধ্যে ভুত লুকিয়ে নেই তো ? তা নাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় আসে কিভাবে? অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সে তালিকা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। যারা এই তালিকা প্রকাশের সাথে জড়িত ছিল তাদের বিষয়ে বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তা দেখার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই অপেক্ষা করে আছেন। বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর তাই এবিষয়ে বর্তমান সরকার দ্রæতই সিদ্ধান্ত নেবেন আশা করা যায়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অফিস এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সাধারণ মানুষকে যেভাবে হয়রানি করা হয় এমনকি বিভিন্ন কাজ করতে যেভাবে ঘুষ নেয়া হয় তা বন্ধে বর্তমান সরকার কি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে তাও নতুন বছরে বাংলাদেশের জনগণ দেখার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এই ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে পারলেই দেশের জনগণের কষ্টার্জিত অনেক টাকাই বেচে যাবে এবং তা দিয়ে সাধারণ জনগণ অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে যাবে।
বিগত বছরে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশে এবং বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে বিশেষ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধ ঘোষণা বাংলাদেশের জনগণের উন্নতিকে আরো ত্বরান্বিত করবে বলে বিদেশি রাষ্ট্র প্রধানরা আশা করছে। মূলত বাংলাদেশ রাস্ট্রটি জন্মের পর থেকেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিছু দুঃখ জনক পরিস্থিতির শিকার হয়। দেশটি স্বাধীনতা অর্জনের পরই তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে এ দেশেরি কিছু নরপশু। আর এরা সবাই মিলে বাংলাদেশের ইতিহাসই বদলে দিতে চেষ্টা করেছিল বছরের পর বছর।
কিন্তু এদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি এদের সকল ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে। বাংলাদেশ আওয়ামী ক্ষমতায় এসেই দেশের চিহ্নিত রাজাকার এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার করে এজাতিকে কলংক মুক্ত করে। তারপর তারা একের পর এক দেশের কল্যাণে কাজ করতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন প্রাজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পৃথিবী ব্যাপি স্বীকৃত। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে অকুণ্ঠ সনর্থনের কারণে। নতুন ২০২০ সালকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সরকারের এমন পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। মুজিব বর্ষ হিসেবে নতুন বছরটিতে বর্তমাম সরকার তাদের কর্মের সুফল শতভাগ জনগণের কাছে পৌঁছাতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে বলে আশা যায়। সে উপলক্ষে তারা বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণও সুফল পাবে।
আমরা প্রত্যাশা করবো বিগত বছরের সব গøানি ভুলে সফলতাকে বুকে ধারণ করে ২০২০ সালে বাংলাদেশ সবার প্রচেষ্টায় সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। একটি সুখী এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়াই হোক নতুন বছরে আমাদের সকলের প্রত্যাশা।