94

আজ জাতীয় সমবায় দিবস। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের প্রথম শনিবার সরকারিভাবে এ দিবসটি পালিত হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও গুরুত্বের সাথে এ দিবসটি একই দিনে সারা দেশে পালিত হচ্ছে। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন-সমবায়ে উন্নয়ন’ রাখা হয়েছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র জননেতা যিনি স্বপ্ন দেখে ছিলেন প্রতিটি বাঙ্গালী খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উন্নত জাতি হিসাবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। জীবনের একেবারে শুরুতেই তিনি এই উপলব্ধিকে ধারণ করতে পেরেছিলেন বলেই এদেশের গরিব, দুঃখী খেটে খাওয়া মানুষকে তিনি গভীরভাবে ভালবাসতেন। তাঁর জীবন কাহিনী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একেবারেই ছাত্র জীবন থেকে তিনি সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন এবং অনগ্রসর এক পল্লীতে স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। এই জন্য তাকে পরাধীন দেশে বহুবার জেল খাটতে হয়েছে। তবুও তিনি অবিচল নীতিতে অটল থেকে সাধারণ মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে এবং অজ পাড়াগাঁয়ে জন্মেছিলেন বলেই এদেশের গরিব দুঃখী অভাবগ্রস্ত ও ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের জীবনযাপন তার কাছে খুব চিরচেনা ছিলো। তিনি দেখেছিলেন এদেশের এই হতভাগ্য মানুষগুলি কি কষ্টে জীবনযাপন করে তথাকথিত জমিদারদের অত্যাচার সহ্য করেছে। তাই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন যেভাবেই হোক এদেশের হতভাগ্য গরিব মানুষগুলিকে তাদের ভাগ্য উন্নয়ন করে বিশ্ব দরবারে স্থান করে দিতে হবে। এই জন্য বাঙালি জাতির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাকে পাকিস্তান আমলে বারবার কারাভোগ করতে হয়েছে এবং শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে ব্যাপকভাবে অত্যাচারিত হতে হয়েছে।

১৯৬৭ সালে কারা অভ্যন্তরে থাকাকালীন সময়ে তাঁর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ, যা তিনি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করতে পেরেছিলেন, পাঠ করলে দেখা যাবে যে, তিনি কিভাবে এদেশের সাধারণ মানুষকে ভাল বাসতেন এবং তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে গেছেন। অধিকার বঞ্চিত বাঙালি জাতির স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে তাকে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর কঠিন অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তিনি তার পথ থেকে বিচ্যুত হন নাই। বাঙালি জাতির হাজার বৎসরের শ্রেষ্ঠ এই মহান নেতা তাঁর নেতৃত্বের মোহিনী শক্তি দিয়ে পুরো বাঙালি জাতিকে একত্রিত করে স্বাধীনতার মন্ত্রে উৎজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তার ফসল হিসাবে ১৯৭১ সালে মাত্র নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাঙালি জাতি নিজস্ব সত্তা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছিল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র মহান নেতা যিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে একটি জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তা হচ্ছে স্বাধীকার বঞ্চিত হতভাগ্য বাঙালি জাতিকে তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাতে এবং তাঁর মহান নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অনেক স্বপ্নের এবং অনেক আকাক্সক্ষার স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। নয় মাস স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুরো বাংলাদেশকে একটি শ্মশান ভূমিতে পরিণত করেছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ এর জানুয়ারি মাসে যখন স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন তখন সারাদেশ ছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত এবং ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। দেশের এক কোটি মানুষ তখনও ভারতে শরণার্থী হিসাবে আশ্রিত। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ এবং কোটি কোটি অসহায়গ্রস্ত মানুষকে পূনর্বাসন করা, ধ্বংসপ্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনরায় চালু করা এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া মিল কারখানা চালু ইত্যাদি সহ অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন দেশকে গড়ে তোলার মত কঠিন দায়িত্বভার তাঁকে গ্রহণ করতে হয়। সদ্য স্বাধীন দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরপরই তিনি দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন সহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে গভীর মনোনিবেশ করেন। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা গেছে যে, এই সময় কিছু দেশীয় স্বাধীনতা বিরোধী শত্রæ ও আন্তর্জাতিক চক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার কাজে নেয়া পরিকল্পনাগুলি বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ধ্বংসপ্রায় দেশকে পুনর্গঠন ও উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজে বঙ্গবন্ধুকে কঠিন পরিশ্রমে মনোনিবেশ করতে হয়। স্বাধীনতার পরপর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পুনগর্ঠিত ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা ছিল এক কঠিন কাজ। স্বাভাবিক ভাবেই এই গুরু দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুকেই নিতে হয়। দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করা ও দেশবাসীর খাদ্য যোগান দেয়া এবং দেশত্যাগী শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা তখনকার পরিস্থিতিতে দূরহ হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল সাধারণ মানুষের কল্যাণের রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এদেশের মানুষ স্বাবলম্বী হবে এবং বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তাই তিনি বহিঃবিশ্বের সাহায্য গ্রহণ করতে কুন্ঠাবোধ করতেন এবং বহিঃবিশ্বের সাহায্য এনে এই সকল সমস্যা সাময়িকভাবে দূর করার পথ পরিহার করে স্থায়ী পথ হিসাবে সমবায়কে বেছে নিয়েছিলেন। তাই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে সমবায়ের ডাক দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে’। তিনিই প্রথম দেশের বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ জনগণ, যারা হতদরিদ্র এবং অশিক্ষিত, তাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সমবায়কে একমাত্র অবলম্বন হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। সদ্য স্বাধীন দেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে গিয়ে তার গভীর পর্যবেক্ষণে বেড়িয়ে এলো অমিত সম্ভাবনাময় এদেশের মাটি ও মানুষ। পরিবেশ ও প্রকৃতিই সবচেয়ে বড় সম্পদ। যেহেতু বঙ্গবন্ধু এদেশের মাটি ও মানুষকে গভীরভাবে ভালবাসতেন তাই এই সম্পদকে যথার্থ কাজে লাগাতে এবং দেশ গঠনের নিয়ামক হিসাবে এক পর্যায়ে গ্রহণ করলেন সমবায় ভিত্তিক কর্মযজ্ঞ। দেশকে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে বিভোর বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে এবং মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ, সম্পদের সুষম বন্টন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুযোগ সুবিধা দান নিশ্চিত করার গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৩ (খ) অনুচ্ছেদে দেশের উৎপাদন যন্ত্র, উৎপাদন ব্যবস্থা ও বন্টনপ্রণালী সমূহের মালিকানার ক্ষেত্রে সমবায়ী মালিকানাকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় মালিকানা খাত হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের র‌্যালীতে সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার আহবান জানিয়ে বলেছিলেন ‘আগামী পাঁচ বৎসরে সরকার বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামে বাধ্যতামূলকভাবে বিভিন্নমুখী সমবায় চালু করবে’। এই ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সমবায়ের মাধ্যমে দেশের সম্পদকে সুষমভাবে ব্যবহারের জন্য জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের ইংগিত দিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে বলা যায় ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ গঠন করেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠন করা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিতে দ্রæত পরিবর্তন আনয়নপূর্বক সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা। এই প্রসঙ্গে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে এবং পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে একটা করে কো-অপারেটিভ হবে। পাক-ভারত উপমহাদেশে সমবায় আন্দোলনের ইতিহাস বেশ পুরানো। তবে তথ্য মতে ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০৪ সালে প্রথম কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি অ্যাক্ট সর্বপ্রথম জারি করা হয়। এরপর থেকে সমগ্র ভারতে সমবায় আন্দোলন বিকাশ লাভ করতে থাকে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে সমবায় আন্দোলন সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের প্রত্যাশা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হবো। আর ২০৪১ এ উন্নত দেশের সারিতে আমাদের অবস্থান সুনিশ্চত করার প্রত্যয়ে আমরা আজ টেকসই উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নয়নের পথে যাচ্ছি। কিন্তু এ স্বপ্নের বীজ যার দ্বারা রোপিত হয়েছিল তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ কিংবা বাঙ্গালীর কোন উন্নয়ন দর্শনের অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একই সত্তার এপিঠ-ওপিঠ। বঙ্গবন্ধু হচ্ছে এমন একটি সমবায় দর্শন যা বাংলার আপামর জনগণের মুক্তির আলোকশিখা। বঙ্গবন্ধু মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন সমবায় সমিতি একটি সাধারণ প্রতিষ্ঠান নয়, সমবায় সমিতি এমন একটি জনকল্যাণ ও উন্নয়ন মূলক আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে থাকে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টা, উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ, সদস্যদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির প্রয়াস, সর্বোপরি সদস্যদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সাধন করা। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে কো-অপারেটিভ অর্থাৎ সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এবং যোগদান করে সমবায়ের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন দেশের প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করার। তিনি গণমুখী সমবায় আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছিলেন। সমবায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন কত বিশাল ছিল তা ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে তার বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তিনি বলেছিলেন ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই জন্য গণমুখি সমবায় আন্দোলকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা সমবায়ের পথ গণতন্ত্রের পথ, সমাজতন্ত্রের পথ। সমবায়ের মাধ্যমে গরিব কৃষকেরা যৌথভাবে উৎপাদন খাতের মালিকানা লাভ করবে। সমবায়ের মাধ্যমে গ্রাম বাংলায় গড়ে উঠবে ক্ষুদ্র শিল্প। যার মালিক হবে সাধারণ কৃষক, শ্রমিক এবং ভূমিহীন নির্যাতিত দুঃখী মানুষ’।
বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত ‘বাধ্যতামূলক বহুমুখী গ্রাম সমবায়’ কর্মসূচি ছিল একটি যুগান্তরকারী বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। এটি ছিল একটি সমবায় উপযোগী জনমুখী ও উন্নয়নমুখী চিন্তার আলোকে জনবান্ধব কর্মযজ্ঞ। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা তথা সামগ্রিক আর্থ সামাজিক পরিমন্ডলে ব্যাপক পরিবর্তন আসতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় বঙ্গবন্ধুই প্রথম দেশের সীমিত সম্পদ সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে ছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, যে মহান ব্যক্তি আজীবন হতভাগ্য বাঙালি জাতির স্বাধীকার ও ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্নে বিভোর থেকে আজীবন কঠিন সংগ্রাম করে গেছেন অশুভশক্তির বিরুদ্ধে সেই মহান পুরুষকে তার আজীবনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রস্তুতিতেই কিছু সংখ্যক কুচক্রী ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাতের আঁধারে নিমর্মভাবে সপরিবারে হত্যা করে। কিন্তু বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বাঙ্গালী জাতির স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বর্তমানে সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় চলমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরি, বিশ্বশান্তির বাতিঘর, বাংলার শান্তিকামী মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, বর্তমান বিশ্ব মানবিক মূল্যবোধের লালন ও পালনকারী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত ও আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আশা করা যায় বাংলাদেশের সম্পদ সুষম ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ অচিরেই সোনার বাংলায় পরিণত হবে। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন পর্যালোচনা করি তবে দেখা যাবে যে, বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল সমবায়ের মাধ্যমে দেশের সীমিত সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করে দেশের হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন সহ সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, যেখানে তিনি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সমবায়কে। আজকের বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনা ও উন্নয়ন দর্শন একান্তই প্রাসঙ্গিক। তাই বলতে হয় আমাদের যা কিছু অর্জন, যতসব উন্নয়ন তার ভিত্তিমূলে রয়েছে জাতির জনকের আজীবন স্বপ্নলালিত উন্নয়ন ভাবনা- জনকল্যাণমুখী উন্নয়নের স্বপ্ন। দেশকে স্বয়ম্ভর করতে হলে সমবায়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর এ দর্শন বাস্তবায়নে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনাকে পাথেয় করে আমাদের মানসিকতার ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে আসুন আমরা সকলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গড়ে তুলি আমাদের কাঙ্খিত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। ৪৮তম জাতীয় সমবায় দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন-সমবায়ে উন্নয়ন’ সাফল্যমন্ডিত করতে আসুন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও সমবায় ভাবনাকে পাথেয় করে বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনকে অর্থবহ করে তুলি।

লেখক : সম্পাদক
দি চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ