69

‘আমি সারা পৃথিবীর সব দেশে আমার পায়ের চিহ্ন রাখতে চাই। এবং সেটা করতে চাই বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েই।’
কথাগুলো বাংলাদেশি নারী বিশ্বপর্যটক কাজী আসমা আজমেরির। এ পর্যন্ত বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ১০০-র বেশি দেশে ঘুরেছেন তিনি। তার পরিকল্পনা, পৃথিবীর সব দেশ সফরের।
কেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন তিনি?
এ প্রশ্ন করলে কাজী আজমেরি বলেন, আমি ২০১০ সালে ভিয়েতনাম গিয়েছিলাম, ইচ্ছে ছিল সেখান থেকে কম্বোডিয়া যাবো। কিন্তু ইমিগ্রেশনের লোকেরা আমার রিটার্ন টিকেট নেই এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে আমাকে সে অনুমতি দেয় নি।
সেদেশের ইমিগ্রেশন আমাকে ২৩ ঘন্টা জেলে বন্দী করে রাখে। আমি খুব কান্নাকাটি করেছিলাম। ওই ২৩ ঘন্টা জেলে থাকার সময়ই আমি চিন্তা করলাম, আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে বাইরের মানুষ বাংলাদেশের পাসপোর্টকে সম্মানের চোখে দেখবে, তাদের হয়রানি করবে না- বলছিলেন কাজী আজমেরি।
বাংলাদেশি পাসপোর্টের কারণে অনেক বিমানবন্দরে মানুষকে হয়রানি হতে দেখেছেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বভ্রমণের চিন্তা মাথায় আসে তার।
বাংলাদেশ আমার দেশ, আমি চাই এ দেশকে মানুষ চিনুক। আমরা বাংলাদেশিরা কোনো কোনো দেশে হয়তো যাই শ্রমিক হয়ে, কিন্তু আমরা ভ্রমণপিপাসু এবং পর্যটক হিসেবেও যে কোথাও যেতে পারি সেটা আমি দেখাতে চাই। গত অক্টোবরে আমি ১০০টি দেশ সফর পুরো করেছি, আমার চোখে এটা বাংলাদেশি পাসপোর্টের জয়।
এ বছর তার পরিকল্পনা হচ্ছে, আইসল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে যাওয়া।
কীভাবে বিশ্বভ্রমণের পোকা মাথায় ঢুকলো তার? ছোটবেলা থেকেই আমি খুব দুরন্ত ছিলাম। ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলা আর আমার স্কুল জীবন কেটেছে খুলনায়। এরপর আমি ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করি। সেসময় থেকেই আমার বেড়ানো শুরু হয়।
প্রথমে আমি গিয়েছিলাম থাইল্যান্ডে, কিন্তু তখনও সমস্ত পৃথিবীর ঘুরবো এমন কোন পরিকল্পনা ছিল না। তবে ২০০৯ সালে আমি নেপালে যাই এবং এভারেস্ট দেখি। সেই হিমালয় দেখার পরই আমার মনে হয়, এটাই সময়। তার পর থেকেই আমি পৃথিবীর নানা দেশে যাবার ভিসা সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে থাকি।
তিনি এমন অনেক দেশে গিয়েছেন যেখানে বাংলাদেশকে লোকে চেনে না, ইন্ডিয়া মনে করে। তখন আজমেরিকে বুঝিয়ে বলতে হয় যে বাংলাদেশ কোথায়।
ভ্রমণের খরচ কিভাবে মিটিয়েছেন? তার কথা, এ জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতে হয় তাকে। তিনি ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডে ছিলেন, তখন সেখানেও চাকরি করে ভ্রমণের টাকা জমিয়েছেন।
একজন নারী হিসেবে, পর্যটক হিসেবে আমাকে সব সময়ই স্ট্রাগল করতে হয়েছে। ভিসা নিয়ে, অন্য নানা কিছু নিয়ে। যেহেতু বাংলাদেশি পাসপোর্ট আমার তাই ইচ্ছে করলেই যে কোন দেশে যেতে পারি না। আমাকে ভিসা পাবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে মরক্কো। তার পর মিশর, পিরামিড দেখেছি। কিউবাও খুব ভালো লেগেছে। বলিভিয়া গিয়েছি, ব্রাজিল গিয়েছি ৫০তম দেশ হিসেবে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়।
বলিভিয়ায় চে গুয়েভারাকে যে জায়গাটায় হত্যা করা হয়েছিল, ১০ মাইল পায়ে হেঁটে সেই জায়গাটায় গিয়েছি। একজন নারী হিসেবে তার এই বিশ্বপর্যটক হবার প্রয়াসে নানা বাধা এসেছে বলছিলেন, কাজী আজমেরি।
বাংলাদেশের একজন নারী হিসেবে বা মুসলিম কালচারের দিক থেকে এটা ডিফিকাল্ট। তবে মানুষের সাথে কিভাবে মিশতে হবে, কিভাবে তাদের ফেস করতে হবে তা নিয়ে আমি আগে থেকেই তৈরি হয়েছি। আমার আম্মু কিছুটা সাহায্য করেছেন। আমার যে গহনা ছিল সেটা বিক্রি করে আমি শুরু করেছিলাম। কাজের ছুটিতে এক সপ্তাহ বা ১০ দিন – এরকম সময় নিয়ে দেশভ্রমণে বেরুতাম।
আমার আব্বু বলতেন, আমার পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দেয়া হবে। তুমি যে এরকম নানা দেশে ট্রাভেল করছো এটা কাউকে বলা যাবে না- বলতেন তিনি।
আমার কাজিন, পাড়া-প্রতিবেশী বা বন্ধুরাও এটা সহজ ভাবে নিতো না। তারা বলতো, কেন তুমি এভাবে নিজের টাকা খরচ করে ঘুরে বেড়াচ্ছ। কেন ইউরোপে একা একা ঘুরে বেড়াবে? এরকম অনেক সমস্যা হয়েছে। তবে এখন বাংলাদেশে দৃষ্টিভঙ্গীর একটু পরিবর্তন হয়েছে, একথাও বলছেন কাজী আজমেরি।

গাজীপুরে কংকাল চুরি
ঠেকাতে কবর পাহারা
বিবিসি বাংলা
ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুর একটি শিল্প এলাকা হলেও প্রায়শই এখানে কবর থেকে কংকাল চুরির ঘটনার খবর বের হয়। সম্প্রতি এ জেলার একটি গ্রামেই কিছুদিনের মধ্যে ঘটে গেছে অনেকগুলো কবর চুরির ঘটনা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন গ্রামের অরক্ষিত কবর থেকে কংকাল চুরি করে সেগুলো ঢাকায় পাঠায় স্থানীয় একটি চক্র।
সম্প্রতি কংকাল চুরির সময় আটক হন এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চুরির পর একেকটি কংকাল থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা পান তারা।
জেলার শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাভেদুল ইসলাম বলছেন, দু-মাস আগে এমন একটি ঘটনার জের ধরে তারা এক ব্যক্তিকে আটক করেছেন। যোকে আটক করেছি, তার কাছ থেকে অনেক তথ্যও আমরা পেয়েছি। কবর চুরির কথা সে স্বীকারও করেছে। এরপর থেকে এ ধরনের ঘটনার খবর আমাদের কাছে আর আসেনি।
তবে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজমাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, ১০/১৫ দিন আগেও নিজমাওনা গ্রামে দুটি কবর চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এরপর এলাকাবাসীকে নিয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও গ্রাম্য চৌকিদারদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। চুরির ঘটনা জানার পর পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নিচ্ছে। আর আমরাও সতর্ক হয়েছি। মেম্বারদের বলা হয়েছে।
ওই এলাকার অধিবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বলছেন, তার এক নিকটাত্মীয়ের কবর থেকে মৃতদেহ চুরি হয়েছে কিছুদিন আগে। আমার আত্মীয় ঢাকায় দুর্ঘটনায় মারা গেছিলো। পরে এলাকায় এনে কবর দেয়ার পর সেই কবরেও চুরি হয়েছে।
তিনি জানান, এ ধরনের এমন আরও বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর তারা পেয়েছেন ওই এলাকা থেকেই।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা গ্রাম সম্প্রতি নিজে ঘুরে এসেছেন গাজীপুরের একজন সাংবাদিক। তিনি জানিয়েছেন, এক মাসের মধ্যেই সেখানে ত্রিশটির মতো কবর চুরির ঘটনা ঘটেছে।
যদিও শ্রীপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুন্নাহার বলছেন তাদের এখনো বিষয়টি কেউ অবহিত করেনি।
আব্দুস সামাদ বলছেন, সাধারণত পল্লী এলাকায় কবর দিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাখা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো আর ইট দিয়ে বাধাই করা হয়না বা পাকা করা হয় না। এরপর ২/৩ মাস পরে অনেক সময় দেখা যায় মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে।
অনেকে ভাবে শিয়ালে খুঁড়েছে। কিন্তু গত কিছুদিনে অনেকগুলো কবরে এমন দেখার পর লোকজনের সন্দেহ হয়। দশদিন আগে আমার বাড়ির কাছেই এমন একটি কবর পাওয়া গেছে যেখান থেকে কংকাল চুরি হয়েছে।
তিনি জানান চুরির ঘটনায় এক ব্যক্তিকে ধরাও হয়েছিলো। তার কাছে থেকেই জানা গেছে, কংকাল সংগ্রহ করে সে স্থানীয় একটি মাছ ও মুরগির খাবার তৈরির কারখানায় রাখতো। পরে সেখান থেকে এগুলো ঢাকায় পাঠানো হতো।
গাজীপুরের একজন সাংবাদিক জানান চুরি হওয়া কংকাল আসলে কয়েক ধাপে বিক্রি হয়।
গ্রামে যারা চুরি করে তারা ৩০/৪০ হাজার টাকায় সেগুলো বিক্রি করে ঢাকায় তাদের লোকজনের কাছে। তারা আবার এগুলো বিক্রি করে আরেকটি চক্রের কাছে। এভাবে মেডিকেল বিশেষ করে ঢাকার একটি নামকরা হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট লোকজনের কাছে পৌঁছায় বলে জানা গেছে।
তিনি বলেন, এ কারণে গ্রামের কবরস্থানগুলোতে এবার পাহারার ব্যবস্থা করেছেন এলাকাবাসীরা।
কংকাল চুরি এবারই প্রথম? স্থানীয়রা বলছেন, না। এবারই প্রথম ঘটনা নয় এগুলো। বরং আগেও ঘটেছে এবং গাজীপুরের নানা এলাকায় এ ধরণের কংকাল চুরির ঘটনা ঘটে। যার বেশিরভাগই থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় না।
স্থানীয় একজন সাংবাদিক বলছেন গত তিন বছর ধরেই এসব ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। তবে বেশি গ্রাম পর্যায়ে হয় এবং একেবারেই সাধারণ ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেই এগুলো চৌকিদার দফাদারের বাইরে আসে না।
জানা গেছে কালিয়াকৈর উপজেলার একটি গ্রামে গত বছর প্রায় দু-ডজন কংকাল চুরির ঘটনা বের হয়েছিলো। আরও কয়েকবছর আগে ২০১২ সালে গাজীপুর পৌর এলাকার একটি কবরস্থান থেকে লাশ ও কংকাল চুরির ঘটনা নিয়ে বেশ শোরগোল হয়েছিলো। সেবার মোট ২৩টি কবর থেকে চুরির ঘটনা ঘটেছিলো। এরপরেও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়মিত এ ধরণের চুরির খবর পাওয়া গেছে।
গত বছরের নভেম্বরেও কালিয়াকৈর কবরস্থান থেকে অন্তত এগারটি কবর খুঁড়ে কংকাল চুরির ঘটনা ঘটেছিলো। আর এ বছরের ৩০শে মার্চ রাতে মওনা থেকে মুসা নামে এক ব্যক্তিকে কবর খুঁড়ে কংকাল চুরির সময় আটক করে স্থানীয়রা। পরে তার কাছেই আরও অনেক লোকের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও তারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।