৯ শতাধিক অভিবাসী শিশুকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র

67

আদালতের নির্দেশের পরও যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো সীমান্তে গত বছর থেকে প্রায় এক হাজার অভিবাসী শিশুকে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে এ প্রক্রিয়া বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। যুক্তরাষ্ট্রের একটি শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠী দাবি করেছে বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে। দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) সান ডিয়াগোয় মামলা দায়ের করতে গিয়ে বলছে, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনসহ ছোটখাট অপরাধের কারণে শিশুদের মা-বাবাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। বিচারকের নির্দেশের পরও সীমান্তে শিশুদের বিচ্ছিন্নকরণ অব্যাহত রয়েছে।
এক উদাহরণ তুলে ধরে সংস্থাটি বলছে, ডায়পার পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এক-বছরের কন্যা শিশুকে তার বাবার কাছ থেকে নিয়ে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। আরেকটি ঘটনায় তিন বছরের কন্যা শিশুকে তার পিতার কাছ থেকে আলাদা করা হয়। কারণ তিনি প্রমাণ করতে পারেননি যে তিনি মেয়েটির পিতা। পরে পরিবার ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে। এর মধ্যে আটক অবস্থায় শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসিএলইউ’র এক অ্যাটর্নি লী জিল্যার্ন্ট বলেন, ‘এটা দুঃখজনক যে ট্রাম্প প্রশাসন শিশুদের তাদের পিতামাতার কাছ থেকে আলাদাকরণ অব্যাহত রেখেছে।’ জিল্যার্ন্ট আরও বলেন, ‘এই নিষ্ঠুর ও অবৈধ নীতিমালার শিকার হাজার হাজার পরিবারের সঙ্গে আরও ৯ শতাধিক পরিবার যোগ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে আদালতের আদেশও অগ্রাহ্য করছে।’ গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসী শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। মেক্সিকোর অবৈধ অভিবাসন-প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণের পর এই অভিযান পরিচালনা শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন।
অতীতে যেসব মানুষ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতো এবং অপরাধের কোনও রেকর্ড ছিল না, তাদের আইনের আওতায় অপরাধী সাব্যস্ত না করে শুধুই অস্থায়ীভাবে আটক করা হতো কিংবা বিতাড়িত করার সুপারিশ করা হতো। মা ও শিশুরা সাধারণত একসঙ্গেই থাকতো।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে আইনগত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার প্রথম ৬ সপ্তাহেই প্রায় ২ হাজার শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতীতে এমন নজির দেখা যায়নি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওত শিশুদের পরিবারের কাছে ফেরার আকুতি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। তাদের কান্নার ছবি দেখে নড়েচড়ে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদরা। সবার চাপে ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
চাপের মুখে শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নকরণ ঠেকাতে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করলেও অভিবাসী প্রশ্নে এখনও পূর্বের জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থাকেন ট্রাম্প। তবে একইসঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের ‘অপরাধী’ শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা ও শিশুদেরকে পরিবারের সঙ্গে থাকতে দেওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেয়। মার্কিন আদালতের রায় অনুযায়ী ২০ দিনের বেশি কোন শিশুকে আটকে রাখার এখতিয়ার নেই অভিবাসন কর্তৃপক্ষের। তাই ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ও আদালতের রায়ের অবৈধ অভিবাসীর বিচার ও শিশুদের পরিবারের সঙ্গে থাকার প্রক্রিয়া সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।