৮০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র দুইজন!

24

চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সাধারণ মানুষ। উপজেলার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে কাগজে কলমে ১১ জন চিকিৎসকের পদ থাকালেও বর্তমানে পোস্টিং রয়েছে মাত্র ৪ জন। এর মধ্যে একজন ডেপুটেশনে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে রয়েছেন। কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুইজন। যোগদানের পর থেকেই অন্যজনের দেখা মিলেনি। তিনি হলেন চিকিৎসক ইফতেখারুল ইসলাম। চিকিৎসক না থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন আলীকদম উপজেলার সাধারণ মানুষ।
সূত্র জানায়, প্রায় ৮০ হাজার লোকের বসবাস এই উপজেলায়। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের এসব মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র মাধ্যম সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পাহাড়ের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো নিরুপায় হয়ে চিকিৎসা নিতে সরকারি হাসপাতালে আসেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিন অনেকেই বিনা চিকিৎসায় বাড়ি ফিরে যান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার পোস্টিং দেয়া হলেও প্রশিক্ষণ কিংবা প্রশাসনিক কাজের অজুহাতে দেখিয়ে কর্মস্থলে প্রায় অনুপস্থিত থাকেন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা। অথবা ডেপুটেশনে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। আবার সরকারি এ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পোস্টিং দেয়া হলেও উপর মহলে তদবির করে বদলী হয়ে যান অনেকেই। ফলে জোড়াতালি দিয়ে চলছে আলীকদম উপজেলার মানুষের চিকিৎসা সেবা।
অন্যদিকে আলীকদম হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে কোন প্রকার ডিউটি ছাড়াই বেতন নিচ্ছেন চিকিৎসক ইফতেখারুল ইসলাম। চলতি বছরের ৬ ফেব্রæয়ারি আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকেই দেখা মিলেনি এই চিকিৎসকের। আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শহিদুর রহমানের সাথে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিনিময়ের প্রায় দীর্ঘ সাত মাস যাবত এই সুবিধা ভোগ করে আসছেন ডাক্তার ইফতেরখারুল ইসলাম। অতিরিক্ত আয়ের জন্য তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম ডেলটা হাসপাতালে চেম্বার করছেন।
তবে এই কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, ডাক্তার ইফতেখারুল ইসলাম সাত মাসের মধ্যে সিএল ও ইএল মিলে তিন মাস ছুটি ভোগ করেন। সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর আরো এক মাসের ইএল দেখানো হয়েছে ওই ডাক্তারকে। যা আগামী ৮ অক্টোবর শেষ হবে।
সূত্র জানায়, অবশিষ্ট তিন মাসও তিনি কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই ছুটি কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ডা. ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। বাড়ি থেকে যাতায়াত করেই আমাকে চাকরি করতে হয়। তার জন্য আমার পক্ষে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়না। বর্তমানে আমি চট্টগ্রাম ডেলটা হাসপাতালে চেম্বার করছি।
তবে ইউএইচএন্ডএফপিও’কে মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, আলীকদম উপজেলা জনবহুল এলাকা। এখানে কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক নেই। যার কারণে এখানকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই একমাত্র ভরসা। এখানে সব সময় রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক নেই। যারা আছেন তারাও নামে মাত্র আছেন। নিয়মিত আসেন না। এজন্যে জরুরি কোনো রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাহিরে নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা।
এবিষয়ে বান্দরবান সিভিল সার্জন ডা. অংশৈপ্রু মার্মা বলেন, সরকার আমাদেরকে বেতন দেয় মানুষের সেবার জন্য। সরকারি বেতন নিয়ে দয়িত্বে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না চাইলে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে পারে। আমি বিষয়টি দ্রæত তদন্ত করে দেখবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।