৬ মাসেও মিলছে না গাড়ির স্মার্টকার্ড

183

রেজিস্ট্রেশন করার ৬ মাসেও গাড়ির স্মার্টকার্ড মিলছে না চট্টগ্রাম বিআরটিএতে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার গাড়ির মালিক। প্রায় ২০ হাজারের অধিক গাড়ি মালিক এখনও কার্ড পাননি। বিআরটিএ বলছে- এখানে আমাদের কোন হাত নেই। গাড়ির স্মার্টকার্ড সরবরাহের কাজটি ‘টাইগার আইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে থাকে। তাদের কার্ড প্রিন্টিং মেশিন নষ্ট থাকার কারণে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, নতুন রেজিস্ট্রেশন করা মোটরযানের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত উচ্চ নিরাপত্তা ফিচারসমৃদ্ধ ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) দেওয়া হয়। বিআরটিএ’র ভাষায় এ ডিআরসিকেই ‘স্মার্ট কার্ড’ বলা হয়। বিআরটিএতে রেজিস্ট্রেশন করা গাড়িগুলোর ডিআরসি সেবা দিয়ে আসছে তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড’। টাইগার আইটি জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করে থাকে। গত বছর জুন পর্যন্ত ডিআরসি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও জুলাই থেকে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এরপর থেকে কোন গ্রাহকই নিয়মিত কার্ড পাচ্ছেন না।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বালুছড়াস্থ বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) কার্যালয়ের আলাদা একটি ভবনে টাইগার আইটি বাংলাদেশ লি. তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়ি মালিকদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করছে। স্মার্টকার্ডের জন্য প্রতিনিয়ত বিআরটিএতে ধর্ণা দিচ্ছেন অনেকে। কিন্তু কখন পাবেন তার নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
ভুক্তভোগীদের একজন মো. কামাল উদ্দিন। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে নিজ প্রয়োজনে মোটর বাইক কিনেন। যথারীতি তিনি চট্টগ্রাম বিআরটিএ-তে নিজের মোটরবাইকটি রেজিস্ট্রেশন করেন। তাকে এক বছরের মেয়াদ দিয়ে কর্তৃপক্ষের সিল-সই দেয়া কম্পিউটার প্রিন্টেড একটি রেজিস্ট্রেশন সনদ ও টেক্সটোকেন দেওয়া হয়। পরের সপ্তাহে তিনি বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। অক্টোবর মাসে তার ডিজিটাল নম্বর প্লেটটি আসলেও অদ্যবধি স্মার্টকার্ডটি হাতে পাননি এ মোটর বাইক মালিক।
শুধু মোটর বাইক মালিক কামাল উদ্দিন নন, তার মতো অসংখ্য গ্রাহক তাদের গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার ৬ মাস পরেও ডিআরসি পাননি। আদৌও কখন এ স্মার্টকার্ড মিলবে তারও ইয়ত্তা নেই।
বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার কুর্মিটোলায় জাবালে নুর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকে সারাদেশে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সড়কে শৃংখলা ফেরাতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে গাড়ির ডকুমেন্ট পরীক্ষাসহ চালক-মালিকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলাচল করতে বাধ্য করেন। এরপর থেকেই মূলত রেজিস্ট্রেশন না করা মোটরবাইক রেজিস্ট্রেশন করার হিড়িক পড়ে।
আবার লাইসেন্সবিহীন চালকরাও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। এরপর থেকে গত ৯ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) প্রায় ১৪ হাজার মোটর বাইক রেজিস্ট্রেশন হয়। পাশাপাশি দুই হাজার ৭শ নতুন সিএনজি অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশন করা হয়। আবার বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, প্রাইভেট কারসহ ৫ হাজার গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়। এসব গাড়ির বেশিরভাগ মালিক এখনো স্মার্ট কার্ড পাননি।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল-১ এর সহকারী পরিচালক তৌহিদ হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘স্মার্টকার্ডের কাজটি টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান করে থাকে। কিন্তু বিআরটিএ অভ্যন্তরে তাদের অফিস থাকর কারণে সাধারণ গ্রাহকরা মনে করেন বিআরটিএ স্মার্টকার্ডের কাজটি করছে। কিন্তু এখানে বিআরটিএ চট্টগ্রামের কোন হাত নেই। আমরা প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় মাস দুয়েক আগে একসাথে ১৭ হাজার কার্ড প্রিন্ট করে আমাদের সরবরাহ দেওয়া হয়। কিন্তু গাড়ির স্মার্টকার্ড নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আগে যেখানে প্রতিমাসে আড়াই থেকে তিন হাজার স্মার্ট কার্ড দেওয়া হতো। কিন্তু গত মাসে চট্টগ্রামে মাত্র ৬শ কার্ড এসেছে।’
জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করে টাইগার আইটি বাংলাদেশ লি. এর চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামে বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করি। গ্রাহক ও গাড়ির যাবতীয় তথ্য আমাদের সেন্ট্রাল সার্ভারে চলে যায়। সার্ভার থেকে ঢাকা কার্ডগুলো প্রিন্ট হয়। কিন্তু একটি মেশিন নষ্ট থাকার কারণে এখন নিয়মিত কার্ড সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ তবে আগামী মাসের মধ্যে এসমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।