৬৬ দেশে করোনার হানা, বাড়ছে আতঙ্ক

64

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে বিশ্বের ৬৬ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ।
শুধু চীনেই এই ভাইরাসে ২ হাজার ৯শ’ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে চীনে দাবি, এখন করোনায় তাদের দেশে আক্রান্ত ও মৃতের হার কম। এদিকে চীনে বাইরে ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরানে এই ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসে আফগানিস্তানে ১ জন, আলজেরিয়ায় ১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৩০ জন, মৃত ১, অস্ট্রিয়ায় ১০ জন, বাহরাইনে ৪৭ জন, বেলারুশে ১ জন, বেলজিয়ামে ১ জন, ব্রাজিলে ২ জন, কম্বোডিয়ায় ১ জন, কানাডায় ২৪ জন, ক্রায়েশিয়ায় ৬ জন, চেক প্রজাতন্ত্র ১ জন, ডেনমার্কে ৩ জন, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ১ জন, ইকুয়েডরে ৬ জন, মিশরে ২ জন, এস্তোনিয়ায় ১ জন, ফিনল্যান্ডে ৩ জন, ফ্রান্সে ১০০ জন (মৃত ২),
জর্জিয়ায় ১ জন, জার্মানিতে ১১১ জন, গ্রিসে ৭ জন, হংকং য়ে ৯৮ জন (মৃত ২) ,আইস ল্যান্ডে, ১ জন, ভারতে ৩ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ২ জন, ইরানে ৯৭৮ জন ( মৃত ৫৪), ইরাকে ১৯ জন, আয়ারল্যান্ডে ১জন, ইসরাইলে ৭ জন, ইতালিতে ১,৬৯২ জন ( মৃত ৩৪) , জাপানে ৯৪৪ জন ( মৃত ১২ ) , কুয়েতে ৪৬ জন, লেবাননে ১০ জন, লিথুয়ানিয়ায় ১ জন, লুক্সেমবার্গে ১ জন, ম্যাকাওয়ে ১০ জন, মালয়েশিয়ায়, ২৫ জন, ম্যাক্সিকোয় ৫জন,
মোনাকোতে ১ জন, নেপালে ১ জন, নেদারল্যান্ডে ৭ জন, নিউ জিল্যান্ডে ১ জন, নাইজেরিয়ায় ১ জন, উত্তর ম্যাসেডোনিয়ায় ১ জন, নরওয়েতে ১৫ জন, ওমানে ৫ জন, পাকিস্তানে ৪ জন, ফিলিপাইনে ৩ জন ( মৃত ১), কাতারে ৩ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪২১২ ( মৃত ২৬ ), স্পেনে ৭৩ জন, শ্রীলঙ্কায় ১ জন, সুইডেনে ১৩ জন, সুইজারল্যান্ডে ১৮ জন, তাইওয়ানে ৪০ জন, থাইল্যান্ডে ৪৩ জন ( মৃত ১), সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৯ জন, যুক্তরাজ্যে ৩৫ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ৮৯ জন ( মৃত ২ ) , ভিয়েতনামে ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছে।
বিশ্ব পরিস্থিতি কী: সারাবিশ্বে সংক্রমণের সংখ্যা বেশ বেড়েছে, তবে চীনে এই হার কমেছে। ইউরোপের হটস্পট বা সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের মুখে থাকা ইতালিতে গত ৪৮ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। গত রবিবার এ খবর জানিয়েছেন দেশটির বেসামরিক সুরক্ষা বিভাগের প্রধান।
দেশটিতে অন্তত ৩৪ জন মারা গেছে এবং ১৬৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। আমাজন জানিয়েছে, ইতালিতে থাকা তাদের দুই কর্মী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
ইতালিতে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে অন্তত ৩৪ জন মারা গেছে এবং ১৬৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে জরুরি কোবরা বৈঠক ডাকা হয়েছে যেটি সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কোন কিছুর পরোয়া করবে না কর্তৃপক্ষ। ভাইরাসে দেশটিতে এখনো পর্যন্ত ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছে।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থাকা দেশ দক্ষিণ কোরিয়া সোমবার জানিয়েছে যে, ৪৭৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। এনিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪২১২ জনে। এর মধ্যে ৩০৮১ জন দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েগু শহরে আক্রান্ত হয়েছে- এর মধ্যে ৭৩% আক্রান্তের ঘটনার সাথে শিনচিওঞ্জি গির্জার যোগসূত্র রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে যে, ওই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা একে অন্যকে আক্রান্ত করেছে এবং পরে তারা প্রায় অ-শনাক্ত অবস্থাতেই দেশটির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজধানী সোলের শহরটির এক কোটি বাসিন্দাকে বাড়িতে থেকেই কাজ করার আহব্বান জানিয়েছেন এবং জনসমাগমপূর্ণ স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত বিশ্বের অন্যতম দেশ ইরান বলেছে যে, দেশটিতে ৯৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ৫৪ জন মারা গেছে। চলতি সপ্তাহেই কাতার, ইকুয়েডর, লুক্সেমবার্গ এবং আয়ারল্যান্ড তাদের দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী থাকার কথা নিশ্চিত করেছে।
চলতি সপ্তাহেই কাতার, ইকুয়েডর, লুক্সেমবার্গ এবং আয়ারল্যান্ডেও করোনা ভাইরাস আক্রান্তের খবর এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কেও একজন আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। স¤প্রতি ইরান সফরের পর ৩০ এর কোটায় থাকা ওই নারী আক্রান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫০ এর কোটায় থাকা একজন মারা গেছেন। তবে তার অন্য আরো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল বলে জানা যায়।
চীনের অবস্থা কী : সোমবার চীন জানিয়েছে যে দেশটিতে আরো ৪২ জন মারা গেছে যারা সবাই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা ছিল। নতুন করে আরো ২০২ জন আক্রান্ত হয়েছে যাদের মধ্যে মাত্র ৬ জন হুবেই এর বাইরের বাসিন্দা।
চীনের অভ্যন্তরে এ নিয়ে ২৯১২ জন মারা গেলো এবং ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের মুখপাত্র বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হবে আবারো কাজ শুরু হওয়ার পর আক্রান্তের যে ঝুঁকি বাড়বে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
চীনের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই ধাক্কা খেয়েছে- রেকর্ড হারে কারখানার কাজকর্ম ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা বলেছে, ভাইরাসের কারণে চীনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যে স্থিরতা এসেছে তার কারণে চলতি বছর দূষণের হার নাটকীয়ভাবে কমেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে: রবিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভাইরাসটি মূলত তাদেরকেই বেশি আক্রান্ত করছে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যারা ইতিমধ্যেই অসুস্থ। বেশিরভাগ রোগীর উপসর্গই মৃদু এবং মৃত্যুহার ২% থেকে ৫% এর মাঝামাঝি।
চীনের ৪৪ হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রথম বড় আকারে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মধ্য বয়সীদের তুলনায় বয়ো-বৃদ্ধদের মধ্যে মৃত্যুহার ১০ গুণ বেশি।
মৌসুমী ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার মাত্র ০.১% হলেও তা ব্যাপক মাত্রায় সংক্রামক। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় চার লাখ মানুষ ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
করোনা ভাইরাসের অন্য দুটি সংক্রমণ যেমন সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম-সার্স এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম-মার্স এ মৃত্যুহার এর চেয়ে বেশি।