৫ শতাধিক জীপ ভর্তি জ্বালানি কাঠ ইটভাটায় পাচার হচ্ছে প্রতিদিন

205

সন্ধ্যা হলেই চন্দ্রঘোনা ফেরির দৃশ্যপট বদলে যাই। ফেরিতে শুধু জ্বালানী কাঠ ভর্তি জীপ আর জ্বীপ। ফেরি দিয়ে পার করছে চেরাই কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটের ১০ /২০ টি জ্বালানী কাঠ ভর্তি জীপ। ফেরি পার হয়ে জ্বালানী কাঠ ভর্তি জীপ বেপোরোয়া গতিতে চন্দ্রঘোনা, হোছনাবাদ ইউনয়নের নিশ্চিন্তাপুর উত্তর রাঙ্গুনিয়া শতাধীক ইট ভাটায় পাচার করছে। চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ, চন্দ্রঘোনা ফরেস্ট অফিস ও চোরাই কাঠ পাচার কারী থেকে গাড়ি প্রতি টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেভাবে জ্বালানী কাঠ পাচার হচ্ছে অচিরেই কাপ্তাই প্লাপউড বাগান বিভাগ ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বনায়নকৃত বিভিন্ন বাগান উজাড় হতে চলেছে। এভাবেই চলতে থাকলে এসব বাগান বৃক্ষ শুন্যে পরিণত হবে। পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন দিয়ে সন্ধার পর জ্বালানী কাঠ পাচারের কাঠ ভর্তি জীপের দীর্ঘ সারি। সরফভাটা, শিলক পদুয়া থেকে বন উজাড় করে প্রতিদিন শত শত গাড়ি পাচারের দৃশ্য যে কাউকে অবাক করে দেয়। এসব গাড়ির সারি সিন্ডকেটের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে। কমপক্ষে শতাধীক ইট ভাটায় প্রতিদিন ৫ শতাধীক জীপ ভর্তি কাঠ পাচার হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা। জানাযায়, ইটভাটার মৌসুমের শুরুতে ইটভাটার মালিকরা ভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীদের অগ্রীম টাকা প্রদান করে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের জন্য। এতে এই লাইনে অর্ধশতাধীক চোরাই কাঠ পাচারকারীরা স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গাছ কর্তনকারীদের সাথে অর্থ দিয়ে সরকারি বাগান থেকে মূল্যবান গাছ কেটে জ্বালানী কাঠ হিসেবে পাচারের জন্য ব্যবস্থা করে দেন। চোরাইকাঠ পাচারকারীরা স্থানীয় ভাবে পুলিশও বনবিভাগকে ম্যানেজ করে বেপোরোয়াভাবে জ¦ালারনী কাঠ পাচার করে প্রতিজন কাঠ পাচারকারী এ মৌসুমে বিশাল অর্থের মালিক বনে যায়। শীতের এ মৌসুমে এ ব্যবসা অনেক লাভের। এ জন্য চোরাই কাঠ পাচারকারীরা সরকারি বাগান নিধন করার জন্য রিতীমত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এছাড়াও চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে বিরামহীন গতিতে চলছে জালানি কাঠ পাচারের জিপ। সড়কে এসব গাড়ির কারণে স্বাভাবিক যান ও জন চলাজল মারাত্নক সমস্যা সৃষ্টি করছে। কোন বাধা ছাড়াই শতাধিক ইট ভাটায় ঢুকছে জ্বালানি কাঠের গাড়ি। দিনে ২০ লাখ টাকার কাঠ পুড়ছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শতাধিক ইটভাটায়। জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ীচক্র সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এসব কাঠ কেটে জিপে (চাঁদের গাড়ি) করে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছে। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক দিয়ে প্রকাশ্যে এসব কাঠ নেওয়া হলেও বনবিভাগ ও প্রশাসন নির্বিকার।
গত অক্টোবর মাস থেকে জ্বালানী কাঠ পাচার ইট ভাটায় শুরু হয়েছে। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই, রাজস্থলী সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ পুড়ানোর কারণে উপজেলার সার্বিক পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকা করা হচ্ছে। অভিলম্বে কাঠ পুড়ানো বন্ধ করা না হলে রাঙ্গুনিয়ায় পরিবেশ রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে ওঠবে। কাঠ পুড়ানো এই মহাউৎসব বন্ধ করার জন্য অচিরেই ভ্রাম্যমান আদালতের যৌথ অভিযান পরিচালনার জোর দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। অপরদিকে চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক, রাঙ্গুনিয়া ডিসি সড়ক, ফেরিঘাট চন্দ্রঘোনা সড়ক, শিলক কালিন্দারানী সড়ক, বেতাগী আমানুল্লাহ সড়ক, মরিয়মনগর চৌমুহুনী ডিসি সড়ক, সরফভাটা মীরেরখীল সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতে চাঁদের গাড়ি যোগে কাঠ পাচার কালে জন চলাচল মারাত্বক বিঘ্ন ঘটে। বেপরোয়া গতিতে জ্বালানি কাঠ বহনকারী চাঁদের গাড়ির চলাচলে যেকোন সময় মারাত্বক বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে। সড়কে উঠলে এসব জ্বালানি কাঠ বহনকারী গাড়ির অস্বাভাবিক গতির কারণে সড়কের সাধারণ মানুষের চলাচলে আতংঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরছে। শনিবার বিকেলে সরেজমিনে সরফভাটার গোডাউন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জামাল এক্সপ্রেস নামের একটি জীপে জ্বালানি কাঠ তোলা হচ্ছে। জানতে চাইলে গাড়িচালক মো. সবুর জানান, সরফভাটার পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে আনা এসব কাঠ উত্তর রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। একই দিন রাজানগর ইউনিয়ন ও নিশ্চিন্তাপূর কোদালা চন্দ্রঘোনা ইটভাটায় গিয়েও জ্বালানি কাঠ পোড়াতে দেখা যায়। জানতে চাইলে ইটভাটার জনৈক ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ বলেন, আমাদের ভাটায় প্রতি মৌসুমে কয়লার বিকল্প হিসেবে জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। তবে এবার আগের চাইতে বেশি জ্বালানি কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। বেতাগী কেএমবি ইটভাটার মালিক মো. ফরিদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনে আমরা ইটভাটা চালাচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী কয়লা না পাওয়ায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কাঠ পুড়নো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট, ইসলামপুর, রাজানগর, ঠান্ডাছড়ি, হোসনাবাদ, কোদালা, পোমরা, বেতাগী, সরফভাটা ও বাঙ্গালহালিয়া এলাকার অন্তত শতাধিক ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো মহা উৎসব শুরু হয়েছে। আগামী ৪ মাস এ মহোৎসব চলবে। চন্দ্রঘোনা রাইখালী ফেরি দিয়ে রাজস্থলী ও কাপ্তাই পাল্পউড বাগানের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের খুরুশিয়া দশমাইল এলাকা থেকেও চন্দ্রঘোনা হয়ে হোসনাবাদ নিশ্চিন্তাপুরের টি ইটভাটায় কাঠ পাচার হয়। এছাড়া, রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের রানীরহাট, ইসলামপুর, কোদালা, পদুয়া, সরফভাটার চিরিঙা ও পোমরার বন থেকেও কাঠ পাচার হচ্ছে সমানে। স্থানীয় লোকজন জানান, এভাবে প্রতিদিন শতাধিক চাঁদের গাড়ি করে ২০ লক্ষাধিক টাকার জ্বালানি কাঠ বিভিন্ন ইটভাটায় ঢুকছে। রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেও প্রচুর কাঠ পাচার হয়ে আসছে ভাটাগুলোতে। আর এতে শতাধিক কাঠ ব্যবসায়ী জড়িত। বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ ছাড়া এভাবে প্রকাশ্যে কাঠ পাচার ও পোড়ানো সম্ভব হতো না বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে কাঠ পাচার ও পোড়ানো চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বনাঞ্চল অচিরেই বৃক্ষশূন্য হয়ে যাবে এবং এতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সুত্রে জানা যায়, শতাধিক জ্বালানি কাঠ পাচারকারী ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট গঠন করে রাঙ্গুনিয়া ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি কাঠ পাচার করছে। ব্যাপক লাভবানে জ্বালানি কাঠ ব্যবসায় হওয়ায় ইট তৈরির ৩ মাসের মৌসুমে ব্যাপক অর্থ ভিত্তের মালিক হচ্ছে বলে জানায়। পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়ার বন উজাড় করে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ ইটভাটায় যাওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানান, কাঠ পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। ইতি মধ্যে গোডাউনে জ্বালানী কাঠ ভর্তি ২টি জ্বীপ আঠক করা হযেছে। বলে তিনি জনান। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, অভিযানের মধ্য দিয়ে জ্বালানী কাঠ পাচার বন্ধ করা হবে।