৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট

58

‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশা সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেটে খরচের যে হিসাব ধরেছেন, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮.১ শতাংশের সমান। আর বিদায়ী অর্থবছরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দিয়ে যাওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৫ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৮.৩ শতাংশের সমান।
এবার সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।
কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬.২৮ শতাংশ।
গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭.২১ শতাংশের মত।
বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। খবর বিডিনিউজের
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ৩ লাখ ১৬৬১২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। অর্থনীতিবিদরা বাজেট ঘাটতির এই পরিমাণকে গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যেই ধরেন। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।
এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮.২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।
৮.২% প্রবৃদ্ধির আশা :
নতুন অর্থবছরে ৮ দশমিক ১২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যাতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন বাজেটে টাকার অংকে জিডিপি ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপির আকার ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা ধরা হলেও সংশোধিত বাজেটে সেটাকে বাড়িয়ে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আট মাসের (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) তথ্য হিসাব করে বলছে, অর্থবছর শেষে এবার ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশে আটকে রাখার আশা :
গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্য ঠিক করে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মার্চ মাস শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।