৫শ জনের উপর ট্রায়াল

22

করোনার ভয়াল আঘাত ভেঙেচুরে তছনছ করে দিচ্ছে বিশ্ব। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবার খুঁটি। একে রুখার উপায় অজানা। মহামারির মৃত্যুগ্রাসে অসহায় বন্দি মানুষ। এ যেন মৃত্যুর অপেক্ষায় বেঁচে থাকা। কার্যকর কোন প্রতিষেধক নেই, ওষুধও নেই। চারদিকে হাহাকার। তবে এবার আতঙ্কের মাঝেও দেখা দিল আশার আলো। ভরসার কথা শুনিয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। জানিয়েছেন তারা করোনাকে ধ্বংস করার ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেছে।
এখনই ভ্যাকসিন হাতে তুলে দেওয়া যাবে না ঠিকই, তবে কাজ অনেকটাই সাফল্যের দিকে। তাদের আবিষ্কৃত ভেক্টর ভ্যাকসিন ইবোলার মতোই ধ্বংস করবে সার্স-কোভি-২ কে, দাবি অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানী-গবেষকদের। মানুষের উপর এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্যও তৈরি তারা। তার জন্য নাম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। ট্রায়ালে অন্তত ৫০০ জনের উপরে প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাকসিন। খবর বার্তাসংস্থার
জেন্নার ইনস্টিউট ও অক্সফোর্ডের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী এই ভ্যাকসিন ঈযঅফঙী১ হঈড়ঠ-১৯। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল প্রায় শেষ। অক্সফোর্ড জানিয়েছে, সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার উপরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী এমন ৫১০ জনের স্ক্রিনিং চলছে। ইংল্যান্ডের থেমস ভ্যালিতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মানুষের উপর ট্রায়াল চলবে এই ভ্যাকসিনের।
১০ জানুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাসের প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক-বিজ্ঞানী সারা গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল। জেন্নার ইনস্টিটিউট ভাইরোলজি বিভাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ভ্যাকসিন ডিজাইন করা হয়েছে।
জেন্নার ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল বলেছেন, ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা মহামারি হওয়ার সময় ভ্যাকসিন তৈরির দিশা দেখিয়েছিল অক্সফোর্ড। এবার আরও বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) তত্ত¡াবধানে মেসেঞ্জার আরএনএ সিকুয়েন্সকে কাজে লাগিয়ে ক্যানডিডেট ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বায়োটেকনোলজি ফার্ম মোডার্না। সজঘঅ-১২৭৩ ভ্যাকসিন একবারই প্রয়োগ করা হয়েছে এক মহিলার উপরে। অক্সফোর্ডের গবেষক সারা গিলবার্ট বলছেন, অ্যাডেনোভাইরাল ভ্যাকসিন ভেক্টর ও সার্স-কোভি-২ ভাইরাল স্ট্রেনের স্পাইক প্রোটিনকে কাজে লাগিয়ে এই ভ্যাকসিন ঈযঅফঙী১ হঈড়ঠ-১৯ তৈরি করা হয়েছে। দেহকোষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এই ভ্যাকসিন।
ভেক্টর ভ্যাকসিন সাধারণত তৈরি করা হয় কোনও ভাইরাস দিয়ে, যার সারফেস প্রোটিনগুলোকে দেহকোষের মধ্যে ঢুকিয়ে কোষকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়া চলে। এই ভাইরাল প্রোটিনগুলো অ্যান্টিজেন কোডিং প্রোটিন হয়, এরা মানুষের শরীরে ঢুকে কোষকে তার স্বাভাবিক অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য উদ্দীপিত করে। ঠিক যেমনটা হল হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন। যেখানে হেপাটাইটাস বি ভাইরাসকে ব্যবহার করেই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল।
এই গবেষণার অন্যতম মুখ্য গবেষক অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে। সফল হলে এই ভ্যাকসিনের ডোজের মাত্রা ঠিক করা হবে। এই ভ্যাকসিন অনেক সুরক্ষিত ও নিরাপদ। মহামারী ঠেকাতে সার্বিকভাবে কাজে আসবে।
মিডল-ইস্ট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম (মার্স) বা মার্স মহামারি ঠেকাতে ভ্যাকসিন আগেও বানিয়েছে সারা গিলবার্টের টিম। মার্স ও সার্সের সঙ্গেই বিস্তর মিল এই সার্স-কোভি-২ ভাইরাল স্ট্রেনের। তাই এই নতুন ভ্যাকসিন কাজে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গিলবার্ট বলেছেন, সফল হলে সবচেয়ে আগে ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীদের উপরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী যাদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, আগে তাদের উপরেই প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাকসিন।