৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা

92

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জয়ের পর টানা তৃতীয়বার মত ক্ষমতায় এসে একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে নতুন সূচনা করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদায়ী সরকারে থাকা হেভিওয়েট মন্ত্রীদের অধিকাংশেরই জায়গা হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়। গত দুইবার শরিক দলের নেতাদের নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলেও তার নতুন মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের।
প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী প্রথমবারের মত সরকারের দায়িত্ব পালন করতে আসছেন। বিদায়ী সরকারে থাকা ৩০ জনের নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি।
সরকারের ২৪ জন মন্ত্রীর মধ্যে নয়জনই একেবারে নতুন। বিদায়ী সরকারে না থাকলেও আগে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন এমন তিনজনকে শেখ হাসিনা ফিরিয়ে এনেছেন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে।
পুরনোদের মধ্যে যে সাতজন মন্ত্রী নতুন সরকারে টিকে গেছেন, তাদের ছয়জনই আগের দপ্তরে থেকে যাচ্ছেন। এছাড়া গত সরকারের পাঁচজন প্রতিমন্ত্রীর এবার পদোন্নতি হয়েছে।
শেখ হাসিনার গত সরকারে অনির্বাচিত (টেকনোক্র্যাট) মন্ত্রী ছিলেন চারজন, তাদের মধ্যে দুজনকে এবারও সরকারে রাখা হয়েছে। এছাড়া টেকনোক্র্যাট হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছেন একজন।
প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সরকারে আসছেন এই প্রথমবার। তিনজন শেখ হাসিনার গত সরকারেও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আর একজন আগে সরকারে থাকলেও গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন না।
শেখ হাসিনা তার এবারের সরকারে তিন মন্ত্রণালয়ে তিনজনকে উপমন্ত্রী করেছেন, তাদের সবাই নতুন মুখ।
আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে দায়িত্ব পালনের শপথ নেবেন নতুন সরকারের সদস্যরা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল রোববার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও দপ্তর জানিয়ে দেন।
বাংলাদেশে আগে কখনও এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা হয়নি। কারা সরকারে থাকছেন তার চূড়ান্ত তালিকা জানতে সাংবাদিকদের শপথ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। খবর বিডিনিউজের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা :
মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
মন্ত্রী :
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় : আ ক ম মোজাম্মেল হক
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় : ওবায়দুল কাদের
কৃষি মন্ত্রণালয় : আবদুর রাজ্জাক
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : আসাদুজ্জামান খান কামাল
তথ্য মন্ত্রণালয় : হাছান মাহমুদ
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় : আনিসুল হক
অর্থ মন্ত্রণালয় : আ হ ম মুস্তফা কামাল
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় : তাজুল ইসলাম
শিক্ষা মন্ত্রণালয় : দীপু মনি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : এ কে আবদুল মোমেন
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় : এম এ মান্নান
শিল্প মন্ত্রণালয় : নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় : গোলাম দস্তগীর গাজী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় : জাহিদ মালেক
খাদ্য মন্ত্রণালয় : সাধন চন্দ্র মজুমদার
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় : টিপু মুনশি
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় : নুরুজ্জামান আহমেদ
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় : শ ম রেজাউল করিম
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় : শাহাব উদ্দিন
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় : বীর বাহাদুর উ শৈ সিং
ভূমি মন্ত্রণালয় : সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ
রেলপথ মন্ত্রণালয় : নুরুল ইসলাম সুজন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় : ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্রেট)
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় : মোস্তাফা জব্বার (টেকনোক্রেট)
প্রতিমন্ত্রী :
শিল্প মন্ত্রণালয় : কামাল আহমেদ মজুমদার
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় : ইমরান আহমেদ চৌধুরী
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় : জাহিদ আহসান রাসেল
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় : নসরুল হামিদ বিপু
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় : আশরাফ আলী খান খসরু
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় : মুন্নুজান সুফিয়ান
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় : খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় : জাকির হোসেন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : শাহরিয়ার আলম
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় : জুনাইদ আহমেদ পলক
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় : ফরহাদ হোসেন
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় : স্বপন ভট্টাচার্য
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় : জাহিদ ফারুক
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় : মুরাদ হাসান
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় : শরীফ আহমেদ
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় : কে এম খালিদ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় : এনামুর রহমান
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় : মাহবুব আলী
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় : শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (টেকনোক্র্যাট)
উপমন্ত্রী :
শিক্ষা মন্ত্রণালয় : মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় : হাবিবুন নাহার
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় : এ কে এম এনামুল হক শামীম
মন্ত্রিসভার ২৭ জনই নতুন :
নতুন মন্ত্রিসভায় যে ৪৭ জনের নাম এসেছে, তাদের ২৭ জন এবারই প্রথম মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন। এছাড়া ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভার চারজনকেও আবার ফিরিয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা।
কুমিল্লা-৯ আসন থেকে নির্বাচিত মো. তাজুল ইসলাম মন্ত্রিসভায় ঢুকছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি।
তার মতোই সিলেটের সাংসদ এ কে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন, বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই মোমেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন টিপু মুনশি, রংপুর-৪ আসনের এই সাংসদের বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুনশি এর আগে একটি সংসদীয় কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
নতুন শিল্পমন্ত্রী হচ্ছেন নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, নরসিংদী-৪ আসনের এই সাংসদ যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জের সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী পাচ্ছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। খেতাবপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধা গাজী গ্রæপের মালিক, যাদের বিভিন্ন ব্যবসার পাশাপাশি টেলিভিশনও রয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী হচ্ছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-১ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম হচ্ছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী। পিরোজপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত রেজাউল করিম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক। আইনজীবীদের বিভিন্ন ফোরামের নির্বাচন ও কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন মৌলভীবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহাব উদ্দিন। এছাড়া রেলমন্ত্রী হচ্ছেন নুরুল ইসলাম সুজন, পঞ্চগড় আওয়ামী লীগের এই নেতা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।
নতুন মন্ত্রিসভায় ১৯ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ১৫ জনই নতুন। তারা হলেন- শিল্প মন্ত্রণালয়ে কামাল আহমেদ মজুমদার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ইমরান আহমাদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে জাহিদ আহসান রাসেল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আশরাফ আলী খান খসরু, নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা জাকির হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফরহাদ হোসেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে স্বপন ভট্টাচার্য, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জাহিদ ফারুক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মুরাদ হাসান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কে এম খালিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে মাহবুব আলী, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন খুলনার মুন্নুজান সুফিয়ান, যিনি ২০০৯ সালের সরকারেও এই দায়িত্বে ছিলেন।
মন্ত্রিসভার তিন উপমন্ত্রীই এবার প্রথম মন্ত্রিসভায় এসেছেন। তারা হলেন- খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের স্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়) এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম (পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়) এবং মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (শিক্ষা মন্ত্রণালয়)।