৪৩ চাকরির জন্য ৭৩ হাজার প্রার্থীই বলে দেয় চাকরি নেই

70

টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার বেকারত্ব কমানোর দাবি করলেও এ চিত্র ভালো নয় বলে মনে করেন অর্থনীতির অধ্যাপক আবুল বারকাত। নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি হিসেবে পল্লী বিদ্যুতে ৪৩ টি পদের বিপরীতে ‘৭৩ হাজার প্রার্থী’ হওয়ার একটি তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি।
গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫- এর ঘর থেকে ৮ এর কাছাকাছি নিয়ে আসা, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার জন্য প্রশংসিত আওয়ামী লীগ সরকার কর্মসংস্থানেও ব্যাপক সাফল্যের দাবি করে। গেল মাসেই রংপুরে এক নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুব সমাজের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কারো কাছে চাকুরি চাইতে হবে না, নিজেরা চাকুরি দিতে পারবে, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি’।
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল মেয়াদি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ কোটি ৪০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। অপরদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও’র হিসাবে, এই সময়ে বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত নভেম্বরে তাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি ১০ দশমিক ৭ শতাংশ জানিয়ে আইএলও’র প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮ টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে শুধু পাকিস্তান। খবর বিডিনিউজের
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তরুণদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক আবুল বারকাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, ‘বেকারত্ব দূর করতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। পল্লী বিদ্যুতের পরীক্ষায় ৪৩ পদের বিপরীতে যখন ৭৩ হাজার প্রার্থী হয়, তখন বুঝতে হবে ‘চাকরি নেই’। চাকরির বাজার তৈরি করতে হবে’। পাশাপাশি দেশের মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনার ওপর নজর দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি।
নতুন সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কাছে ঋণল স্বীকারের মানসিকতা প্রত্যাশা করে অধ্যাপক বারকাত বলেন, ‘নতুন সরকারের কাজের ক্ষেত্রে ঋণল হতেই পারে। শুরুতেই সেই ঋণল স্বীকার করে নিতে হবে। তারপর সেই ঋণল শোধরানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঋণল স্বীকার করায় দোষের কিছু দেখি না’।
জঙ্গিবাদ নির্মূলে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় তাদেরকে দেখা যায়নি বলে এটা মনে করার কারণ নেই, তারা নাই হয়েছে। এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে, তারা ঘাপটি মেরে আছে। সময় সুযোগের অপেক্ষায় আছে’।
আলোচনা সভায় বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বনের আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতি দমনে, দুর্নীতি প্রতিরোধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। কোনো দুর্নীতি সহ্য করা হবে না, এই মানসিকতা দেখাতে হবে। দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কতোভাবে বাধাগ্রস্ত করে… সেই দুর্নীতি রোধ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কেবল সরকারের প্রশাসন দিয়ে দুর্নীতি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব না’।
তিনি বলেন, ‘অল্প কিছু মানুষ দুর্নীতি করে। তাদের দুর্নীতির জাল এতো বিস্তৃত থাকে, সাধারণ মানুষ তাদের জালে আঁকা পড়ে যায়। সাধারণ মানুষ দুর্নীতিতে জড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়’।