৪টি নৌকার ইঞ্জিন ধ্বংস

95

প্রতি বছরের এপ্রিল-জুন এ সময়ে দেশের একমাত্র মিঠা পানির মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে রুই জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছের নিষিক্ত ডিম ছাড়ে। তাইতো রুই জাতীয় মা-মাছসহ হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত ইঞ্জিনচালিত নৌযানের চলাচল নিষিদ্ধ।
তবুও এসব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল অব্যাহত রেখেছে এক শ্রেণির অসাধুমহল। এসব নৌযানের ডুবন্ত ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতে মা-মাছ, শুশুক বা ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকার চলাচল। তাই প্রশাসনও বেশ তৎপর হয়ে প্রতিনিয়তই হালদায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে চলেছে।
গত রবিবার (২১ এপ্রিল) হালদা নদীর রুই জাতীয় মা-মাছ, শুশুক ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন এক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হালদা নদীর সাত্তারঘাট থেকে উত্তর মেখল এলাকার বিভিন্ন অংশে অভিযান চালিয়ে ৪ টি বালু বহনকারী নিষিদ্ধ ইঞ্জিনচালিত নৌকা জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন। এসময় তাকে সহযোগিতা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স¤্রাট খিসা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ ও থানা পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ৪ টি ইঞ্জিন ধ্বংস করে (পুড়িয়ে ফেলে)। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
পুরো অভিযান তত্বাবধান করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার- এমনটি জানিয়ে ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, ডিম ছাড়ার আগাম সময়ে হালদা নদীর রুই জাতীয় মা-মাছ, শুশুক ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে হালদা নদীতে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ জাল, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও বালু উত্তোলনের সময় ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ করছি। তিনি আরও জানান, রবিবার হালদায় মা মাছ ও ডলফিন রক্ষায় হালদা নদীর সাত্তারঘাট থেকে উত্তর মেখল এলাকার বিভিন্ন অংশে বালু বহনকারী ইঞ্জিনচালিত নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযানে ৪ টি নৌযান আটক করে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছি। তবে অভিযান পরিচালনাকারী দলের স্পিডবোট দেখে ইঞ্জিন নৌকার বেশিরভাগ মাঝি পানিতে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়।
হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে হালদায় দূষণ, মা-মাছ ও শুশুক রক্ষায় কাজ করছি। এপ্রিল, মে ও জুন এ তিন মামের মধ্যে রুই জাতীয় মা-মাছের ডিম ছাড়ার সময়। বৃষ্টি হলে ডিম দিতে পারে মা-মাছেরা। তাই এখন মা-মাছগুলো খুবই দুর্বল থাকে। এ সময় ইঞ্জিনচালিত নৌযান চালালে নৌযানের ডুবন্ত ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতে মা-মাছ ও শুশুক আঘাতে মারা যায়।
ডিম ছাড়ার মৌসুমে প্রতিনিয়তই নিষিদ্ধ যান্ত্রিক যানের (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) ডুবন্ত ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতে হালদা নদীতে মরে পঁচে ভেসে উঠছে মা-মাছ ও শুশুক বা ডলপিনসহ বিভিন্ন জীববৈচিত্র্য। হুমকির মুখে পতিত হওয়া জীববৈচিত্র্য ও নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা জরুরি।
একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনে ইঞ্জিনচালিত নৌযান ব্যবহার ও মা মাছ শিকার করে আসছে। এতে দেড় বছরে ২০টি শুশুক মারা যায়। এছাড়া গত ১৬ এপ্রিল হালদায় একটি শুশুকের বাচ্চা ইঞ্জিনচালিত নৌযানের ডুবন্ত ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতে মারা যায়। এরমধ্যে ৯ এপ্রিল ৮ কেজি ওজনের মৃগেল ও ৪ মার্চ রাউজানের অংকুরীঘোনা এলাকায় ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ভেসে উঠে।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও মেঘের গর্জনে ডিম ছাড়ে মা-মাছ। তবে এবার এপ্রিলের শুরুতে প্রথম জো’তে নদীতে সচরাচর মা-মাছ ডিম ছাড়লেও এবার ছাড়তে দেরি করছে। তবে এ মাসের (এপ্রিল) চলতি সপ্তাহে ভরা পূর্ণিমার দ্বিতীয় জো’তে মা-মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা। তা জাল, নৌকা, ডিম ধরার মশারি জাল, বালতিসহ ডিম সংগ্রহের নানা সরঞ্জাম নিয়ে অর্ধ সহ¯্রাধিক নৌকা নিয়ে প্রহর গুণছেন বংশ পরম্পরায় অভিজ্ঞ হালদা পাড়ের ডিমসংগ্রহকারী মৎস্যজীবীরা।