৩১ বছর পর খুলছে জট

179

১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুমোদন হয়। ওই সময় চাকরির প্রবিধানমালার অনুমোদন আটকে যাওয়ায় দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে বন্ধ ছিল সকল ধরনের নিয়োগ! ফলে শূন্য হওয়া পদে এতদিন ডেপুটেশন, চলতি দায়িত্ব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চলে আসছে ৬০ লক্ষ মানুষের সেবাদানকারী সংস্থাটি। সর্বশেষ গত মাসে নতুন ১ হাজার ৪৬টি পদ সৃজন ও প্রবিধানমালার অনুমোদন হয়। এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি হলেই শুরু হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া। সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়ার এ জট খুলেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চসিক সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৮ সালের অর্গানোগ্রামে ৩ হাজার ১৮০ পদসংখ্যা ছিল। এর মধ্যে সচিব বিভাগে ৩১১, হিসাব বিভাগে ৩৮, স্বাস্থ্য বিভাগে ৩৩৯, শিক্ষায় ৫১৯, প্রকৌশলে ৪৯৪, পরিচ্ছন্নতায় ১ হাজার ১৮১ ও রাজস্বে ২৯৮টি পদ ছিল। ২০০২ সালে ৬ হাজার ৫৪১ জনের অর্গানোগ্রাম সেটআপ পাঠানো হলে ২০১৫ সালে ১ হাজার ৪৬ জনের ছাড়পত্র দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্কেল নির্ধারণসহ নানা জটিলতায় ওই পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত ২৭ মে সচিব কমিটির ৭ম সভায় নতুন সৃষ্ট ১ হাজার ৪৬ পদের মধ্যে ৫০৪ টি রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজন এবং বাকিগুলো সরকারের অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে আউটসোর্সিং নীতিমালা অনুযায়ী পূরণ করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। চলতি মাসেই এই নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা পূর্বদেশকে বলেন, স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অনুমোদনের সবকটি ধাপ পার করেছে অগ্রানোগ্রামটি। প্রবিধানমালা স্থানীয় থেকে অনুমোদেনর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে গেলে অনুমোদন হয়। এখন শুধু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায় সিটি কর্পোরেশন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান মেয়রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা দীর্ঘদিনের জট খুলতে সক্ষম হয়েছি। এতদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় প্রায় হাজারটি শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব, ডেপুটেশন ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চালাতে হয়েছে। ফলে মেধাশূন্য যেমন হয়েছে, তেমনি অনেকটা সাংগঠনিক জটিলতায় চলেছে এ প্রতিষ্ঠান। এখন সেই জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে গত ২০১৭ সালে ১৭ এপ্রিল ১৩ হাজার ৪৫৫ পদসংখ্যার পূর্ণাঙ্গ অর্গানোগ্রাম মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হয়। আগামী কয়েক যুগের প্রয়োজনীয়তা ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করে এই অর্গানোগ্রামে ৫ হাজার ৫০৯টি পদ বাড়ানো হয়েছে। যেখানে প্রশাসন বিভাগে ৯২৬, রাজস্বে ৬৩৭, শিক্ষায় ২ হাজার ২৩৮, হিসাবে ১১২, স্বাস্থ্যে ১ হাজার ৯৭০, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ৩০৫, প্রকৌশলে ২ হাজার ৭৫ ও নগর পরিকল্পনা বিভাগে ১৯২ জনের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্গানোগ্রামে তাদের বেতন স্কেল, নিয়োগের যোগ্যতা, কাজের বিবরণ, নিয়োগের যৌক্তিকতা ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে চসিকে সচিব বিভাগে ৬৬৯, হিসাবে ৫১, রাজস্বে ৩৮৪, স্বাস্থ্যে ১ হাজার ৩১, শিক্ষায় ১ হাজার ৮৩৬, পরিচ্ছন্নতায় ১ হাজার ৯১৭ এবং প্রকৌশলে ১ হাজার ৫৯১ জন মিলে ৭ হাজার ৪৭৯ জন কাজ করছেন।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, ১৯৮৮ সালের পর থেকে সিটি কর্পোরেশনে নিয়োগ বন্ধ। সময়ের সাথে নতুন নিয়োগের প্রয়োজন ছিল। অন্যদিকে মন্ত্রণলায়ে প্রবিধানমালা অনুমোদনের আগ পর্যন্ত সকল প্রকার নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ফলে শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছিল না। তাই আমি দায়িত্ব গ্রহণের পরেই যুগোপযোগী অর্গানোগ্রাম প্রস্তাব করি। আগের জটিলতা অবসান করতে মন্ত্রী-সচিব সবার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করি। এ জটিলতা থেকে মুক্ত হতে না পারলে সিটি কর্পোরেশন মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। তাই অনেকটা লেগে ছিলাম। যার ফলশ্রæতিতে অনুমোদন পেয়েছে নতুন সৃষ্ট পদের অর্গানোগ্রাম ও প্রবিধানমালা। এছাড়া আমরা দুই বছর আগে পূর্ণাঙ্গ অর্গানোগ্রাম প্রস্তাব করেছি। যেহেতু জট খুলেছে পূর্ণাঙ্গ অর্গানোগ্রাম অনুমোদন হতে বেশি সময় লাগবে না। সিটি কর্পোরেশন সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হতে এটির বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মেয়র।