২৩ দিন ধরে উৎপাদন বন্ধ কেপিএমে

36

গ্যাস সরবারহ না থাকায় গত ২৩ দিন ধরে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনাস্থ কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লি. (কেপিএম) এর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে প্রধানমন্ত্রী যে বই তুলে দেন, সে বইয়ের কাগজ এই কেপিএমে উৎপাদিত হয়। র্দীঘ দিন এভাবে মিল বন্ধ থাকায় বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে আশাঙ্কা প্রকাশ করছে মিল কর্তৃপক্ষ। কবে নাগাদ গ্যাস সরবারহ করা হবে তাও সঠিক ভাবে বলতে পারছে না কেউ। এ অবস্থায় কেপিএমে গ্যাস সরবারহ নিশ্চিত করে মিলকে পুনরায় সচল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
সূত্র জানায়, গত ৪ আগস্ট কেপিএমে গ্যাস লাইনের মিটারিং পাটর্স বিকল হয়ে পড়ায় মিলের গ্যাস সরবারহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে মিলের কাগজ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় মিলে স্থায়ী, অস্থায়ী, কোম্পানী মাস্টার রুল ও পে-অফসহ ৮৫০ জন শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা অলস সময় কাটাচ্ছেন। মিলে প্রতিদিন ২৫ থেকে ২৮ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদিত হত। মিল বন্ধ থাকায় দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। উৎপাদন বন্ধ থাকায় মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার মেট্রিক টন কাগজ সরবারহের অর্ডার রয়েছে তা হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কেপিএমের ব্যবস্থানা পরিচালক ড. এমএমএ কাদের জানান, কেপিএমের গ্যাস সরবারহ লাইনের মিটারের পার্টস নষ্ট হওয়ায় মিলের গ্যাস সরবারহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মিলের উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, গ্যাস সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, কিন্তু কবে নাগাদ গ্যাস সরবারহ করা হবে তা সঠিকভাবে জানাতে পারেননি তারা।
তিনি আরও বলেন, বছরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী যে বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন, সে বইয়ের কাগজ কেপিএম থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন বিভাগেও এই প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ সরবরাহ করা হয়। উৎপাদন বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী সেই কাগজ সরবরাহে আমাদের বেশ বেগ পেতে হবে।
চট্টগ্রাম কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহম্মদ মজুমদার জানান, কেপিএমে অবস্থিত গ্যাস লাইনের মিটারিং পার্টসটি দীর্ঘদিনের পুরনো। পার্টসটি নষ্ট হওয়ার কারণে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এটি মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। মেরামত সম্ভব না হলে পার্টসটি বিদেশ থেকে আনতে হবে। ততদিন গ্যাস সরবারহ করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে কেপিএম শ্রমিক কর্মচারী পরিষদ সিবিএ’র সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, গ্যাস সরবারহ বন্ধা থাকায় মিলের উৎপাদন যেমন বন্ধ রয়েছে। তেমনি আবসিক এলাকায় পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবারহ বন্ধ থাকায় শ্রমিক কর্মচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কেপিএমে পুনরায় গ্যাস সংযোগ চালু করে মিলকে সচল করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
উল্লেখ্য গত ২ জুলাই বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের কারণে কেপিএমে ৮দিন কাগজ উৎপাদন বন্ধ ছিল।
প্রসঙ্গত ১৯৫৩ সালে সেই সময়কার এশিয়ার বিখ্যাত কর্ণফুলী কাগজ কল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সনে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা গ্রহণ করে দাউদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্টিজ কর্পোরেশন। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটি বিসিআইসির অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। শুরুতেই প্রতিষ্ঠাটি লাভজনক থাকলেও নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনার কারণে দেশের বৃহত্তম কাগজ কলটি লোকসানের দিকে ধাবিত হয়। র্দীঘ ৭০ বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে।