১ এপ্রিল থেকে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ

39

উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার (এইচএসসি) সময় ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে সারা দেশে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই নির্দেশনার কথা জানান।
১ এপ্রিল থেকেই সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে এবার, যাতে অংশ নেবে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ জন শিক্ষার্থী। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার সময়ও একমাস কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার।
এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘দেশে নানান রকমের কোচিং সেন্টার রয়েছে। আইডিয়ালি কি হওয়ার কথা- শুধুমাত্র যে পরীক্ষা হচ্ছে সে পরীক্ষার কোচিং বন্ধ থাকলে চলত। কিন্তু আমাদের এখানে একই জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রকমের কোচিং হয়, তারপরেও আমরা দেখেছি যখন নিষেধ করা হয় তখনও কিছু অসাধু ব্যক্তি নানাভাবে ওই নিষেধাজ্ঞাকে এড়িয়ে অসাধু উপায় অবলম্বন করেন এবং কোচিং সেন্টার খোলা রাখার বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যান। সে কারণে আমরা বাধ্য হয়েই সকল ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখছি’। খবর বিডিনিউজের
এইচএসসি পরীক্ষার সময় সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হলে অন্য স্তরের শিক্ষার্থীদের যে অসুবিধা হতে পারে সে কথাও বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা এইচএসসি পর্যায়ের নন, তাদের হয়তো সাময়িক অসুবিধা হবে, সে ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ সচেতন। কিন্তু আরও ভালো ব্যবস্থা গ্রহণ পারছি না বলেই বাধ্য হয়ে ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে সকল ধরনের কোচিং সেন্টার আমরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’।
এ বিষয়ে আরও চিন্তা-ভাবনা করে ভবিষ্যতে ‘আরও ভালো কোনো ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বলেন মন্ত্রী, যাতে এক পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকলে অন্য স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না হয়। তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান বা শিক্ষক কোনোভাবে পাবলিক পরীক্ষায় বেআইনি কাজ করলে সে প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করা হবে’।
যদি কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকার একই অংকের টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে বিষয়টি থানায় জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান দীপু মনি। তিনি বলেন, পরীক্ষা চলাকালে এবং আগে-পরে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
এবার সাড়ে ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী :
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন; যা গতবারের চেয়ে ৪০ হাজার ৪৮ জন বেশি। আগামি ১ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত হবে এইচএসসির তত্ত¡ীয় পরীক্ষা। আর ১২ থেকে ২১ মের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে। সচিবালয়ে গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
গত বছর ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এই হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি। শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার ২ হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ৮১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণির এই চূড়ান্ত পরীক্ষা দেবে। গতবারের চেয়ে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১১৮টি; কেন্দ্র বেড়েছে ৩৮টি।
এইচএসসিতে এবার আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৭ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে ৮৮ হাজার ৪৫১ জন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএম-এ এক লাখ ২৪ হাজার ২৬৪ জন এবং ডিআইবিএসে ৪৩ জন পরীক্ষা দেবে। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৬ জন ছাত্র; বাকি ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯ জন ছাত্রী। খবর বিডিনিউজের
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ঢাকার বাইরে এবার বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ২৭৫ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে, এর মধ্যে ১২৭ জন ছাত্র, ১৪৮ জন ছাত্রী। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করে নির্ধারিত আসনে বসতে হবে। ‘অনিবার্য কারণে’ কোনো পরীক্ষার্থীর দেরি হলে রেজিস্ট্রারে নাম, ক্রমিক নম্বর ও দেরির কারণ উল্লেখ করতে হবে। দেরিতে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে পাঠাবেন।
কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমন একটি ফোন ব্যবহার করবেন, যা দিয়ে ছবি তোলা বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না।
ট্রেজারি বা থানা থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-শিক্ষক-কর্মচারীরাও কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রশ্নপত্র বহনের কাজে কালো কাচের মাইক্রোবাস বা এ ধরনের কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। কোন সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে তার কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রæতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন। আর অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা পাবেন অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।